দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান প্রভাব গাছেরও
দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান প্রভাব গাছেরও
আবদুর রহমান বয়াতির এই গানটি নিশ্চয়ই শুনেছ, মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্ত্রী বানাইয়াছে। এই গানে মানবদেহকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করেছের আবদুর রহমান বয়াতির। আমরা কি জানি, হাতঘড়িটি যেমন করে সকাল কয়টা বাজে কিংবা রাত কয়টা বাজে জানিয়ে দিচ্ছে, ঠিক তেমন করেই আমাদের দেহের ভেতরে এমন একটি ঘড়ি আছে, যেটি আমাদেরকে সূর্য ডুবে অন্ধকার হলে নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে ফেল, আবার ভোরের আলো ফুটলে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছে।
আমাদের মধ্যে এক ধরনের দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান ছন্দ আছে, যা বাহ্যিক উদ্দীপনা ও আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের মতো বিভিন্ন প্রাণীর দেহেও রয়েছে দেহঘড়ি, এমনকি গাছেরও।
খটকা লাগছে, গাছ আবার প্রাণীদের মতো ঘুমায় নাকি! আশ্চর্যের বিষয়, গাছেরাও কাজকর্ম সেরে রাতে ঘুমায় এবং ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, তাদের মহাকাশ স্টেশনে যুক্ত একটি যন্ত্রের দ্বারা। নাসা তাদের ইকোস্ট্রেস [ECOSTRESS] নামের একটি যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ করেছে, গাছ সূর্যের আলো পাওয়ার পরেই তা শোষণ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মাটি থেকে শোষিত পানি ও খনিজ লবণের সমন্বয়ে গ্লুকোজ তৈরি করে।
পানি কিভাবে আগুন নেভাতে সাহায্য করে
আমরা নিশ্চয়ই বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি, এই প্রক্রিয়ার নাম সালোকসংশ্লেষণ। গাছ আবার অতিরিক্ত পানি দেহ থেকে বের করে ফেলে, যাকে বলে প্রস্বেদন। নাসার ইকোস্ট্রেস [ECOSTRESS] যন্ত্রটি গাছ থেকে নির্গত তাপীয় অবলোহিত রশ্মি পরিমাপ করে জানায়, স্থানীয় সময় অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের কাছাকাছি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের গাছেরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জেগে ওঠে এবং নিত্যদিনের কাজকর্ম শুরু করে। আবারও রাত হলে গাছদের বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় কাজ বন্ধ থাকে।
রাতে গাছ নিজের পাতাগুলোকে নুইয়ে ফেলে প্রস্বেদনের হার কমানোর জন্য। সূর্যের আলো মূলত গাছের জন্য একটি উদ্দীপনা, যেটির উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতিতে গাছের দেহঘড়িটি গাছকে বলে দেয় এখন সকাল, নাকি রাত। তাই অল্পবয়স্ক সূর্যমুখী গাছগুলো দিনের বেলায় সূর্যের দিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে মুখ করে রাখে।
দেহঘড়ি শুধু সালোকসংশ্লেষণ বা প্রস্বেদনকেই নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু নয়। এটি গাছের বৃদ্ধি, অভিযোজন, হরমোনের নিঃসরণ, এনজাইমের ক্রিয়া, পরাগায়ণ, পাতার নড়াচড়া, ফুল ফোটা, ফুলের সুবাস ছড়ানো ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু আলোই নয় তাপমাত্রাও গাছের দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণে উদ্দীপনা জুগিয়ে থাকে।
সূত্র:- NASA Earth Observatory, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, গুগল স্কলার।
Pingback: নিজেকে নিজে কাতুকুতু দিলে হাসি পায় না কেন - amaderkhabar