যুক্তরাজ্যের শরণার্থী পরিকল্পনা উদ্বেগজনক:- জাতিসংঘ…
যুক্তরাজ্যের শরণার্থী পরিকল্পনা উদ্বেগজনক:- জাতিসংঘ…
ইউএনএইচসিআরের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ভিকি টেনেন্ট বলেছেন, যুক্তরাজ্যের এ পরিকল্পনা কার্যকর হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) যুক্তরাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত শরণার্থী আইনকে খুবই উদ্বেগজনক অ্যাখ্যা দিয়ে এটি এমনকী জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় দরকার এমন অনেককেও আটকে দেবে বলে মন্তব্য করেছে।
ইউএনএইচসিআরের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ভিকি টেনেন্ট বলেছেন, যুক্তরাজ্যের এ পরিকল্পনা কার্যকর হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করবে। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তিনি এই আইন পাসে এবং এ নিয়ে যে কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। এটি অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি আটকাতে জরুরিও নয়।
অন্যদিকে লেবার পার্টি বলেছে, সরকারের এই পরিকল্পনা `বিশৃঙ্খলাকে আরও পাকিয়ে তুলবে`। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সরকার তাদের নতুন শরণার্থী বিষয়ক আইনের যে রূপরেখা হাজির করেছে, তাতে অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে নামা কারও শরণার্থীর মর্যাদা দাবি করা কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা মনে করছি এটা শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সমঝোতার সুস্পষ্ট লংঘন। মনে রাখা দরকার, এমনকী জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় দরকার এমন অনেকের পক্ষেও এটা মানার সুযোগ থাকবে না। কেউ অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছেন, তা বের হলে তার নাগরিকত্ব পাওয়া বা ভবিষ্যতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের পথও রূদ্ধ হয়ে যাবে।
প্রতিবছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে নামা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা মোকাবেলায় নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন এসব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সুনাকের সরকার। ২০১৮ সালেও ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে যেত তিনশর মতো অভিবাসন প্রত্যাশী, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাজ্য সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে বিবিসির নিউজনাইট অনুষ্ঠানে টেনেন্ট বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এই ব্যবস্থা কার্যত অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে ঢুকে আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে।
১৯৫১ সালে বিশ্বের অনেক দেশের সম্মতির মধ্য দিয়ে হওয়া শরণার্থী বিষয়ক সমঝোতা একটি বহুপক্ষীয় চুক্তি। এতে কারা কারা শরণার্থীর মর্যাদা পাবে তা ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি শরণার্থীদের সুরক্ষায় স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর বাধ্যবাধকতার বিষয়টির উল্লেখ ছিল। যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের মানবাধিকার সংক্রান্ত ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে টেনেন্ট বলেন, অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে এখন যেসব ইস্যু এসেছে, তার সমাধান সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও ভালেভাবে পরিচালিত ব্যবস্থাতেই সম্ভব। শরণার্থী ঠিক করার ব্যবস্থাকে কার্যকর করুন। ন্যায্য, দক্ষভাবে এবং দ্রুতগতিতে শরণার্থী বাছাই করুন। যদি কেউ আশ্রয় পাওয়ার যোগ্যতা না রাখে তাহলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠান, আর যারা যোগ্য তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে নিন পুরো প্রক্রিয়াটা আরও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করুন বলেছেন তিনি।
নিউজনাইট অনুষ্ঠানেই রক্ষণশীল এমপি রিচার্ড গ্রাহাম বলেছেন, সরকারের এ নীতি কি দৃঢ়তা, সহমর্মিতা ও যথোপযুক্তভাবে` কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা দিয়ে এর বিচার করা উচিত হবে। স্ট্রাসবুর্গের মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত (ইসিএইচআর) যুক্তরাজ্যের এ পরিকল্পনার বিষয়টি শুনতে পারে, এ সংক্রান্ত ইঙ্গিত পাওয়ার কথা জানালেও এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। ডাউনিং স্ট্রিটের সংবাদ সম্মেলনে সুনাক বলেছেন, নতুন নীতিটি বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্যের ইসিএইচআর ছাড়ার প্রয়োজনীয়তা পড়বে না বলেই মনে করেন তিনি।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান সব কনজারভেটিভ এমপিকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, তাদের প্রস্তাবিত আইনটি ইসিএইচআরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশের বেশি এবং এটি নানান আইনি প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়তে পারে।
তার সরকার আন্তর্জাতিক সব বাধ্যবাধকতা পূরণ করছে বলেও দাবি করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এই ব্যবস্থার কঠোরতা নিয়ে বিতর্ক হবে বলে বুঝতে পারছি আমি। আমি কেবল বলতে পারি, আমরা অন্য সব পথে চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। আমার নীতি খুবই সরল। কারা এখানে আসবে তা কেবল এই দেশ এবং দেশের সরকারই ঠিক করতে পারবে, অপরাধী গোষ্ঠী নয়,” বলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিক।
সরকারের নীতি খুব দ্রুতই অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে নামার চেষ্টা করাদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেও বিশ্বাস তার। তবে হাউস অব কমন্সে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইউভেট কুপার সরকারের বিরুদ্ধে অপরাধী গোষ্ঠীকে ইংলিশ চ্যানেলজুড়ে রাজত্ব করার সুযোগ এবং মানবপাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন। এই (শরণার্থী সংক্রান্ত) বিল কোনো সমাধান নয়। এটি এক ধরনের প্রবঞ্চনা, যা বিশৃঙ্খলাকে আরও খারাপ অবস্থায় ঠেলে দেবে বলেছেন তিনি।