কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণ কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে। কোয়েলের ডিমে আকারের অনুপাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন, একের অধিক কোয়েলের ডিম নিয়মিত খেলে তা আমাদের লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট। কোয়েলের ডিমে আছে বেশ ভালো পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল, যা অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
যেকোনো ডিমই নিঃসন্দেহে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার মতো, কোয়েলের ডিমও তাই। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অবিচ্ছেদ্য উপাদান হতে পারে কোয়েলের ডিম। মাথায় রাখতে হবে কোয়েলের ডিমে আছে বেশ ভালো পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল, যা অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ডায়বেটিস থেকে থাকে বা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কোয়েলের ডিম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া তখন একান্ত কর্তব্য।
বর্তমানে আমাদের দেশে এই পাখির জনপ্রিয়তা বেড়েছে, এর জনপ্রিয়তার কারন হচ্ছে কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের চাহিদা। তাই কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা মেটাতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে বানিজ্যিক ভাবে কোয়েল পালন শুরু হয়েছে। আবার বাসাবাড়িতেও এখন কোয়েল পাখি পালন করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: জিংক বি ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিকা:-
কোয়েলের ডিম খুবই ছোট, ১ টি কোয়েল পাখির ডিম প্রায় ৯ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পরিমাণের দিক দিয়ে ৫টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমপর্যায়ের হয়ে থাকে। একটি মুরগির ডিম ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। প্রোটিন ১.২ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ৪ মিলিগ্রাম, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড ৮৪ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ৭৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১%, রিবোফ্লাভিন ৪%, ভিটামিন বি-১২ ২%, প্যানথোনিক এসিড ২%, আয়রন ২%, সেলেনিয়াম ৪% ও ফসসরাস ২%।
লক্ষণীয় যে, আকারের তুলনায় কোয়েলের ডিমের অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণ কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে। আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণে ৫টি কোয়েলের ডিমেই যতেষ্ট।
কোয়েলের ডিমের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি আছে ২ টি নেতিবাচক দিক, যা আগ্রাহ্য করার উপায় নেই। এই ডিমে থাকে বেশ উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, একটি ছোট কোয়েলের ডিমে থাকে ৭৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল যা আমাদের দৈনিক চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ। কিন্তু সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা সৃষ্টি না করলেও যাদের কোলেস্টেরল লেভেল ইতোমধ্যেই অনেক বেশি, তাদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার আগে ভাবতে হবে। আবার কোয়েলের ডিমে প্রয়োজনীয় ওমেগা ফ্যাটি এসিডও বিদ্যমান, যা শরীরের পক্ষে বেশ উপকারী। আকারের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান, তাই পুষ্টিবিদ ও পুষ্টির ব্যাপারে আগ্রহী মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে।
কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য গুনাগুণ:
# ক্যান্সার প্রতিরোধে:- কোয়েলের ডিমে প্রাপ্ত খণিজ উপাদানগুলোর একটি হলো সেলেনিয়াম, এই খণিজ দ্রব্যটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বেশ সাহায়ক। সেলেনিয়ামে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকোষকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া ও জারণ থেকে রক্ষা করে। স্বাভাবিক মানুষের শরীরে সেলেনিয়ামের ঘাটতি তেমন পরিলক্ষিত না হলেও প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সেলেনিয়ামযুক্ত খাদ্য রাখাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। সেক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম অনেক সহায়তা করতে পারে। এইচ আই ভি ও ক্রন’স ডিজিজ আক্রান্ত মানুষের দেহে সেলেনিয়ামের অভাব লক্ষ্য করা যায়।
# মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতায়:- কোয়েলের ডিম ভিটামিন বি১২ এবং রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২) এর ভালো উৎস, আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি১২, থাইমিন (ভিটামিন বি১) ও ভিটামিন বি২ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্মৃতিশক্তির ক্ষয় রোধে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন বি১২ বেশ সহায়ক। কোয়েলের ডিম কিছু পরিমাণ থাইমিনও (ভিটামিন বি১) এতে বিদ্যমান।
# শক্তি বর্ধক:- আমাদের শরীরের জন্য কোয়েলের ডিম বেশ ভালো একটি শক্তির উৎস হতে পারে। এই ডিম প্রোটিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নতুন রক্ত তৈরিতে আয়রনের ভূমিকা বেশ তাৎপর্যবহ। শরীরে আয়রনের অভাব হলে অ্যানেমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। কোয়েলের ডিমের অ্যামিনো এসিড প্রোফাইল তৈরি করে দেখা যায়, এতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান। সব ধরণের প্রোটিনই বহু অ্যামিনো এসিড অণুর দ্বারা তৈরি চেইন দিয়ে গঠিত হয়। শরীরের ব্লাড শুগার নিয়ন্ত্রণে এদের মধ্যে কয়েকটি অ্যামিনো এসিড বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অন্য কয়েকটি অ্যামিনো এসিড রয়েছে যারা টিস্যুর ক্ষয়রোধ ও নতুন টিস্যু গঠন করে। তাছাড়া কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড, যা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং হরমোন, কোলাজেন ও এনজাইম উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: মিষ্টি কুমড়ায় কোন ভিটামিন থাকে
# যকৃত, ত্বক, চুল ও চোখের সুরক্ষায়:- আমাদের দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার জন্য রিবোফ্লাভিন, যা মূলত ভিটামিন বি ২ নামে পরিচিত, খুবই দরকারী। আমাদের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিতে সাধারণত ভিটামিন বি ২ সহ অন্যান্য বি শ্রেণীর ভিটামিন। আবার কোয়েলের ডিমে আকারের অনুপাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন, একের অধিক কোয়েলের ডিম নিয়মিত খেলে তা আমাদের লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট। শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনেও রিবোফ্লাভিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
Pingback: যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা - amaderkhabar
🦾🦾🦾
Thank U.