ভ্রমণ

বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে

বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম শিকাগো শহরে পরিণত হওয়ায় বানিয়াচং বর্তমানে বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে। বানিয়াচংয়ের নাম অনেকেই জানেন হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম উপজেলা হিসাবে। এখানে রয়েছে প্রাচীন অনেক নিদর্শন। এখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। ঐতিহাসিক কমলারানীর দীঘি, লক্ষীবাওর জলাবন, ৬শ’ বছরের প্রাচীন বিথঙ্গলের আখড়া, প্রাচীন মসজিদসহ রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি। যার মধ্যে সাগরদীঘি বা কমলারানীর দীঘি অন্যতম। দীঘিকে পর্যটনে রূপান্তর করতে এলাকাবাসী ও ভ্রমণপিপাসুরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় বানিয়াচংয়ের এই সাগরদীঘিকে পর্যটনকেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বানিয়াচংবাসীর একটি মাত্র দাবি ছিল, কমলারানীর দীঘিকে পর্যটনকেন্দ্র করার।

প্রধানমন্ত্রী জনসভায় সেই দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি সেই ঘোষণার। বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী {বেসামরিক বিমান ও পর্যটন} অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর এই সাগরদীঘি পরিদর্শনে আসেন। এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু সাগরদীঘির চার পাড়ের মানুষের মামলা থাকায় সরকারপক্ষ সামনে এগোতে পারেনি। সুপ্রিমকোর্টের আপিল ডিভিশনে সেই মামলার রিভিউর আবেদন জানিয়েছিলেন চার পাড়ের বাসিন্দারা। সেই রিভিউ শুনানি বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনো দিন শুনানি শেষ হতে পারে বলে হবিগঞ্জের আর এম (রাজস্ব) শাখা ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আরও জানা যায়, দীঘির চার পাড়ের বাসিন্দাদের পক্ষে মো: জাহাঙ্গীর আলম গং বাদী হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে স্বত্ব একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৭৫। মামলায় শুনানি শেষে এলাকাবাসীর পক্ষেও রায় প্রদান করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ ২০০৬ সালে আপিলও করে, মামলা নং-৬। আপিলে সরকারের পক্ষে রায় আসে। ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা জজ শফি উল্লাহ এ রায় প্রদান করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বাদীপক্ষ রিভিশন দাবি করেন, হাইকোর্ট চেম্বার জজ আদালতে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বাদীপক্ষকে দীঘির আলো, বাতাস ও পানি ব্যবহারের অনুমিত দেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল করলে ২০২২ সালের ২৬ জুলাই মহামান্য হাইকোর্ট ওই আদেশটি বাতিল করে দিঘীটি সরকার পক্ষের ইজারা দিতে বাধা নেই বলে আদেশ প্রদান করেন।

পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যগুলোর একটি

এলাকাবাসীর পক্ষে মো: জাহাঙ্গীর আলম গং সেই আদেশের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিমকোর্টে আপিল ডিভিশনে রিভিউ করেন। সরকার পক্ষ মনে করছে, শুনানি শেষে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট এই রিভিউ খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখবেন। ফলে এই দীঘি পর্যটনে রূপ দিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের পানি সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বাদশ শতাব্দী মধ্যভাগে এ দীঘিটি খনন করেন। খননের পর পানি না ওঠায় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রাজা পদ্মনাভের স্ত্রী কমলাবতী দীঘিতে আত্ম-বিসর্জন দেন বলে একটি উপাখ্যান এ অঞ্চলে বেশ প্রচলিত আছে। এ জন্য এ দীঘিকে কমলারানীর দীঘিও বলা হয়ে। এ দীঘি নিয়ে বাংলা সিনেমা ও মঞ্চনাটক রচিত হয়েছে। এ দীঘির পাড়ে বসে ‘রানী কমলাবতীর দীঘি’ নামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। সে কবিতাটি তার ‘সূচয়নী’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি বলে খ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে ৬৬ একর জায়গা নিয়ে দীঘিটি বিস্তিত এর মধ্যে জলসীমাই ৪০ একর। ১৯৮৬ সালে দীঘিটি পুনর্খনন করান তৎকালীন মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান।

এর চার পাড়ে দিনাজপুরের রামসাগরের আদলে পর্যটন পার্ক তৈরি করা হলে এটিও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে অনেক দর্শনার্থী বা পর্যটক মনে করেন। বানিয়াচংয়ের এই সাগরদীঘি নতুন প্রজন্মের কাছেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রায় সারা বছরই সাগরদীঘি পরিদর্শনে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসেন। বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে প্রধামন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়, সেই আশা করছেন বানিয়াচংবাসী তথা পর্যটকরা।

সমুদ্র নগরীতে বাড়বে কয়েক গুণ পর্যটক

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সাগরদীঘি চার পাশের বাসিন্দাদের মামলা চলমান থাকায় সামনের দিকে এগোনো যাচ্ছে না। যেহেতু মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে রিভিউ আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে, আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই সাগরদীঘিকে পর্যটনে রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই আশ্বাস বাস্তবে প্রতিফলন ঘটবে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, আমরা কিন্তু বসে নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে বাস্তবায়ন করা যায়, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে বানিয়াচং সাগরদীঘিটি লিজ দেওয়া আছে। পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে চারপাড়ের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

11 thoughts on “বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *