দ্বিতীয় মস্তিষ্ক অন্ত্রকে ভালো রাখতে করণীয়
দ্বিতীয় মস্তিষ্ক অন্ত্রকে ভালো রাখতে করণীয়
আমাদের অন্ত্র লাখো নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত, যে কারণে অন্ত্রকে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক হিসেবে ডাকা হয়। পেটের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। কিন্তু পেটের সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্পর্ক আছে আপনি জানেন কি?
শুধুমাত্র খাবার দাবার শোষণ করা পরিপাকতন্ত্রের কাজ নয়, বরং এর চাইতে আরও বেশি কিছু। শরীরে যে পরিমাণ রোগজীবাণু রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। হজমের সমস্যা বা গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা কমবেশি সবাইকে ভোগায়। কী কী প্রয়োজন আপনার অন্ত্রের সেই সব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে লবঙ্গ
মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অন্ত্রের ভেতরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম, ছত্রাক এবং অন্যান্য জীবাণুগুলো। নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো, অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এমন খাবার খাওয়াসহ আরও অনেক অভ্যাস আছে যা খুবই উপকারী অন্ত্রের জন্য।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. সু্ন্নি প্যাটেল বলেন, লাইফ স্টাইলের মাধ্যমে ১ জন মানুষ সে তার মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সেটা ভালো হতে পারে বা খারাপও হতে পারে। ড. প্যাটেল এর মতে, এটা এমন উপযুক্ত বিনিয়োগ, যে কাজের জন্য আপনি কখনই খুব কম বয়সি বা খুব বেশি বয়সি হতে পারবেন না।
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর জিনের তুলনায় বেশি প্রভাব ফেলে পরিবেশগত ও খাদ্যের মতো কিছু বিষয় গুলো। আপনি যা খাচ্ছেন তা শুধু আপনার জন্য পুষ্টি নয়, এটি আপনার অন্ত্রে বসবাসকারী কোটি কোটি জীবাণুকে খাওয়ায় এবং পরিবর্তন করে। আমাদের দেহে কোনো ইনফেকশন হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে অন্ত্রই। আপনি বা আমরা যে খাবারগুলো খাচ্ছি তা থেকে পুষ্টি উপাদান শুষে নিয়ে দেহের জন্য সরবরাহ করে এই অন্ত্রই।
ড. প্যাটেল বলছেন, চাইলেই আপনি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে খুব দ্রুত পরিবর্তন করতে পারেন, এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেই এটা করা সম্ভব। কয়েক মাস সময় লেগে যায় দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ও উপকারিতা পেতে।
গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীয়:- প্রথমেই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে যথাযথ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যতটা সম্ভব বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, সবজি, বাদাম, ফলমূল, শস্যজাতীয় খাবার যে, খাবারে ফাইবার থাকে অন্ত্রের জীবাণুগুলো তা ভালোবাসে। অন্ত্রের সুস্থতায় ফাইবার যুক্ত খাদ্য নির্বাচন করা বেশ জরুরি।
আমাদের অন্ত্রে কয়েক ট্রিলিয়ন জীবাণুর বসতি। জীবাণুগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা তারা নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিকর উপাদান হজমে সহায়তা করতে থাকে। প্রতিটি মাইক্রোবায়াল গ্রুপ একেক ধরনের খাবারের ওপর কাজ করে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের খাবারে। যাহা আমাদের আরও সুস্থ হয়ে ওঠার সঙ্গে সম্পর্কিত।
শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ডায়েটারি ফাইবার ও আয়রন থাকে, যেমন- পালং শাক, ব্রকোলি। নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় এ ধরনের শাক-সবজি থাকলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পর্যাপ্ত ক্যালরি ও ফাইবার রয়েছে কলায়ও। বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপিসহ ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গুলো।
আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রিবায়োটিকের কাজ করে শস্যে থাকা ফাইবার। প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শস্যজাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যা অন্ত্রে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়ার গুলোও স্বাস্থ্য ভাল রাখে। পর্যাপ্ত ফাইবার থাকে ব্রাউন রাইস, লাল আটা, ওটস ইত্যাদি খাবার গুলোতে। এগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হতে পারে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য ভালো রাখে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও শাকসবজি। আবার ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার সংবেদনশীল হতে পারে কারো কারো জন্য। সেজন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
ফার্মেন্টেড ও প্রোবায়োটিক ফুড এই খাবারগুলোতে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- কম্বুচা, কিমচি, দই, চিজ, ভিনেগার, পাউরুটি, কয়েক ধরনের আচার- এগুলো হলো কয়েক ধরনের ফারমেন্টেড ফুড। বিশেষজ্ঞরা বলেন বেশি তেল দেওয়া আচার এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত দুধের তৈরি দই পরিহার করতে। মূলত টকদই খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাতে বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন।
ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি
কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেন, অন্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে যেতে পারে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে, তাই কম খাওয়ার পরামর্শ দেন। যার মধ্যে রয়েছে, সোডা ও কোমল পানীয়, মিষ্টি বা মসলাযুক্ত স্ন্যাকস, মিটবল, চকলেট বার, মিষ্টি, ফিশ নাগেটের মতো ফ্রোজেন খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো ডায়েটে না রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে খারাপ জীবাণু গুলো যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন খাবার গ্রহণের কারণে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলোকে কেউ ডায়েট চার্টের বাইরে রেখে দিতে পারেন এমন আশঙ্কাও বিশেষজ্ঞদের। তারা আরও বলছেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের গঠন, খাদ্যের ম্যাট্রিক্স, যান্ত্রিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাহত হয় যা খাদ্যকে দ্রুত হজম যোগ্য করে তোলে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এমন খাবার খেলে তা নিম্ন অন্ত্রে পৌঁছায় না। তবে এক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
🛂🛂🛂
ধন্যবাদ আপনাকে
Ghjjkgg
ধন্যবাদ আপনাকে