অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য থাকবে কর্ণাটক সরকার
অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য থাকবে কর্ণাটক সরকার
বিগত বিজেপি সরকারের আনা বেশ কিছু বিতর্কিত বিল প্রত্যাহার করতে চায় ভারতের দক্ষিণ রাজ্য কর্ণাটকে সদ্য ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপও যার মধ্যে আছে। খবর বিবিসি।
অতীতে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক, ধর্মান্তরকরণ বিরোধী বিল, গোহত্যা বিরোধী বিলসহ যে সব আইন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক হয়েছে সেগুলোও তুলে নেওয়ার কথা ভাবচ্ছে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস সরকার।
এক টুইটে জানিয়েছেন, কর্ণাটকে কংগ্রেস মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য ও দলের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ছেলে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে। পূর্বতন বিজেপি সরকারের আনা যে সব বিল রাজ্যের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, কর্মসংস্থান তৈরি করছে না, লগ্নি নিরুৎসাহিত করছে এবং যেগুলো অসাংবিধানিক, ব্যক্তি অধিকারের লঙ্ঘন। সেগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কংগ্রেস এমন একটি কর্ণাটক গড়ে তুলতে চায় যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য থাকবে।
এই টুইটে যদিও নাম নির্দিষ্ট করে কোনো বিলের কথা উল্লেখ করা হয়নি, এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাড়গে স্পষ্ট করে দিয়েছেন হিজাব নিষেধাজ্ঞা বিল বা ধর্মান্তরকরণ বিরোধী বিলের মতো সব বিতর্কিত আইনই তাদের নজরে আছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে এর ঠিক আগেই দাবি জানানো হয়েছিল, কর্ণাটকে নতুন সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত রাজ্যের তিনটি বিতর্কিত বিল প্রত্যাহার করা।
অপর একটি পোস্টে, অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে যাওয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা অবিলম্বে তুলে নেওয়া জন্য। নিষেধাজ্ঞার ফলে মুসলিম ছাত্রীরা একদিকে তাদের মতপ্রকাশ ও ধর্মাচরণের অধিকার ও অন্য দিকে শিক্ষার অধিকার মধ্যে একটা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে বলেও অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এর পর পরই বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন সব বিল পুনর্বিবেচনা করা হবে।
হিজাব-বিরোধী বিলসহ যে ৩ টি আইন নিয়ে কর্ণাটকে এখন আবার চর্চা হচ্ছে, সেগুলোকে রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হিসেবেই এতদিন দেখা হয়ে এসেছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিজেপি হিন্দুত্ব এক্সপেরিমেন্টের নতুন পরীক্ষাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল কর্ণাটককে এবং সেই প্রচেষ্টায় বড় হাতিয়ার ছিল কর্ণাটককে বিজেপি এই ৩ টি বিল। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলে অবশ্য দেখা গেছে কর্ণাটকে বিজেপির সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা রাজনৈতিকভাবে সফল হয়নি, কংগ্রেসের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে তারা রাজ্যের ক্ষমতা হারিয়েছে।
ইমরান খানের স্ত্রীও জামিন পেলেন
আবার কংগ্রেস সরকার যখন এই বিলগুলো প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিজেপি কিন্তু এ ব্যাপারে সাবধানী অবস্থান নিতে চাইছে। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী নন, এমন কী দলীয় সভাপতিও নন, প্রিয়াঙ্ক খাড়গে কোন এক্তিয়ারে এই বিলগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলছেন, দলের সিনিয়র এমপি লহর সিং সারোয়া প্রশ্ন।
আবার কর্ণাটক সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেছেন কর্ণাটক সরকার যত তাড়াতাড়ি এই বিলগুলো প্রত্যাহার করে, ততই মঙ্গল, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি হিজাব নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ অসাংবিধানিক, এবং সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে অন্তত ২ জন বিচারপতিও সে কথা মেনে নিয়েছিলেন।
এ ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজ্যের বিজেপি সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা বিল ২০২১ নামেও একটি আইন প্রণয়ন করে, যেটি ধর্মান্তরণ বিরোধী বিল নামেই বেশি পরিচিত।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কর্ণাটকে র উদুপিতে গত বছরের জানুয়ারিতে একটি কলেজের মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে ক্লাসে আসার পর তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে গোটা রাজ্য জুড়ে হিজাবকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু হয়। কর্ণাটকে র তৎকালীন বাসবরাজ বোম্মাই সরকার স্কুল-কলেজে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করত আইন আনে, যা নিয়ে সারা দেশেই তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।
সরকার তখন যুক্তি দিয়েছিল, জোর করে, লোভ দেখিয়ে বা জালিয়াতি করে কাউকে ধর্মান্তরিত না-করা যায় সে জন্যই বিল আনা হয়েছে এবং দোষীদের দশ বছর পর্যন্ত জেল ও ১ লক্ষ রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর এই বিলগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
Pingback: পোশাক রপ্তানি কমেছে বড় দুই বাজারে - Amader Khabar
Pingback: মানব পাচার ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য - Amader Khabar