জাতীয়

ঢাকার বাইরে জেলা শহর ও গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং

ঢাকার বাইরে জেলা শহর ও গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং

দেশে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও দিনে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, দেশে এখন ২৪,১৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না নানা কারণে। বাকি ১৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার মধ্যেও দিনে সর্বোচ্চ সাড়ে বার হাজার ও রাতে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন সাধারণ মানুষ বিগত দেড় মাস, বড় কারণ বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া। আবর গত মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। গত বুধবার দিবাগত রাত একটায় দেশে লোডশেডিং করা হয়েছে ২ হাজার ৮০ মেগাওয়াট। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনে সর্বোচ্চ লোডশেডিং করা হয়েছে বেলা ১১টায় ১৯০১ মেগাওয়াট।

তবে তখন ঢাকা শহরে লোডশেডিং ছিল না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে ১৬ জুলাই থেকে। এখান থেকে দিনে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছিল। পাশাপাশি আদানির ২ টি কেন্দ্র থেকে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও আসছে ৭০০ মেগাওয়াট। এর কারণ পুরোপুরি অর্জিত হয়নি সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো আছে। গ্যাস সরবরাহ কমলে সংকট আরও বাড়বে। দিনে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিল বকেয়া থাকায় তেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না; আর ডিজেলচালিত বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র গত জুনে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে জ্বালানি–স্বল্পতায় ৩৭০০ মেগাওয়াট ও কারিগরি কারণে বন্ধ আছে ৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।

তারেক রহমানের মামলা নুরের বিরুদ্ধে

পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকা ময়মনসিংহের গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একজন গ্রাহক বলেন, রাতে এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে গেছে। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বুধবার ৭২ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সরবরাহ ছিল ৩৫ মেগাওয়াট। অন্য দিকে রংপুরে শহর-গ্রামে আবারও শুরু হয়েছে লোডশেডিং। ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না বিভিন্ন এলাকায়। রংপুর শহর ও আশপাশের এলাকায় গত বুধবার নেসকোর (নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) আওতাধীন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। গড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। রংপুরে পল্লী বিদ্যুৎ-২-এ প্রায় ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গত বুধবার সরবরাহ ছিল ৪৫ মেগাওয়াট। একইভাবে পল্লী বিদ্যুৎ-১-এর আওতাধীন এলাকায় ৯০ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৫০ মেগাওয়াট।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরে সেখানে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দিনে ও রাতে সাত থেকে আটবার বিদ্যুৎ যাওয়া–আসা করছে। দিনাজপুর পৌর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা বর্ষা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বালুয়াডাঙ্গায় গত বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ১০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া–আসা করেছে। দিনাজপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো-১) নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, গত বুধবার লোডশেডিং করতে হয়েছে ৬/৭ ঘণ্টা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *