সাধ্যের সব সুখ মালদ্বীপে…
সাধ্যের সব সুখ মালদ্বীপে…
মালদ্বীপ আয়তনের বিচারে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর একটি। ভৌগোলিক ভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিতএই রাষ্ট্র ১১৯২ বেশি পৃথক পৃথক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এ দেশটির সম্মিলিত 298 বর্গ কিলোমিটার বা a hundred and fifteen বর্গমাইল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা মালদ্বীপ দেশটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয় ।
বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী প্রায় ৬কোটি বছর আগে এই দ্বীপ গুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত মহাসাগরের আরবসাগর নামক অংশে অবস্থিত ১১৯২ এর বেশি দ্বীপ সম্মিলিতভাবে মালদ্বীপ নামে পরিচিত। ভারত মহাসাগরে অংশে ডুবে থাকা একাধিক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই স্থলভাগের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।এর মধ্যে লাভার উপর পরবর্তীতে প্রবাল নামক এক ধরনের জীব বংশবিস্তার করে। এক প্রজন্মের মৃত প্রবালের ওপর পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাল জন্ম নেয়। এভাবে প্রবালের স্তুপ উঁচু হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে নতুন দ্বীপের জন্ম হয়। মালদ্বীপ নামে পরিচিত দ্বীপগুলো এভাবেই তৈরি হয়েছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধ রাজ্যের সিংহাসনচ্যুত শাসক বিজয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সিংহপুর থেকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্মিলিতভাবে সিংহলি নামে পরিচিত এই মানুষগুলো বিজয়ের নেতৃত্বে শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের নতুন করে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মালদ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যা ৫ লাখের বেশি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো মালদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ১১৯২ এর বেশি দ্বীপের মধ্যে মাত্র দুইশো টি তে জনবসতি রয়েছে। আর মাত্র ২০ টি দ্বীপে এক হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। ধারণা করা হয় যে এই দীপ গুলোতে প্রথম মানুষের আবির্ভাব ঘটে অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে।
আবার কয়েকজন খ্যাতনামা মৃতাত্ত্বিক এর দাবি অনুযায়ী ভিজায়া ও তার অনুসারীরা ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে মালদ্বীপ এসেছিলেন। কালের পরিক্রমায় সিংহলিদের হাতে গড়ে ওঠায এই জনপদ গুলোর সাথে আফ্রিকা এবং আরব উপদ্বীপের বেশ কয়েকটি গোত্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যার ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলে কিছু মানুষ এখানে থিত হয়েছিলেন।এই সময় প্রায় স্থাপনায় বাঁশ বা কাঠের অত পচনশীল উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হতো। তাই এ সময়ে নির্মিত কোন স্থাপনাই মৃতাত্ত্বিকদের পক্ষে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাদের ধারণা অনুযায়ী মালদ্বীপের আদিবাসীরা সনাতন ধর্মের অনুসারী হিসেবে সূর্যের উপাসনা করতেন।
এখনো সিংহলি কিছু ধর্মবিশ্বাসে সূর্যের উপাসনা করা হয়ে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক নাগাদ মালদ্বীপের বাসিন্দাদের কাছে বৌদ্ধ ধর্মের বাণী পৌঁছে যায়। ভারতবর্ষের বিখ্যাত সম্রাট অশোকের শাসন আমলে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মালদ্বীপে বেশ কয়েকটি উপাসনালয় তৈরি করেছিলেন। উপাসনালয়গুলো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
মালদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত কমপক্ষে ৫৯ টি দীপে স্থাপনা খুঁজে পাওয়া গেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আবির্ভাবের পর খ্রিস্টাব্দ দ্বাদশ শতক পর্যন্ত টানা ১৪০০ বছরের এই দ্বীপগুলোতে বৌদ্ধদের আধিপত্য বজায় থাকে। এরপর ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে কোনো একসময় এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। দ্বাদশ শতকের আরব বণিকদের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কের গুরুত্ব এতটাই বেড়েছে যে মালদ্বীপের রাজা বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয় আবু আল বারাকাত ইউসুফ নামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী বৌদ্ধ রাজা কে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন ।
প্রবালের বনে ঘুরে বেড়ানো বর্ণিল নীল রং এবং বাহারি ডিজাইনের ছোট-বড় অসংখ্য মাছের সাথে সাঁতার কাটার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করার জন্য মালদ্বীপ উপযুক্ত স্থান।
বৈধ পাসপোর্ট এবং অবস্থানকালীন খরচ মেটানোর মতো যথেষ্ট পয়সা সঙ্গে থাকলেই হলো। ভ্রমণের জন্য আগে থেকে কোন ভিসা সংগ্রহের প্রয়োজন পড়ে না। সরাসরি মালদ্বীপের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর কর্তৃপক্ষের হাতে ভিসা পাওয়া যাবে। বুঝতে পারছেন প্রকৃতি এই মালদ্বীপকে আক্ষরিক অর্থেই দুহাত ভরে দান করেছে। কিন্তু প্রকৃতি আবার তার দেওয়া উপহার মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেন ছিনিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে।