মাসোহারা পান হায়দ্রাবাদের নিজামদের বংশধরেরা
মাসোহারা পান হায়দ্রাবাদের নিজামদের বংশধরেরা
বর্তমানে মোট সাহেবজাদা আছেন ৪,৫০০ জন। নিজামদের বংশধরদের সাহেবজাদা হিসেবে ডাকা হয়। এ বংশধরদের মজলিস-ই-সাহেবজাদাগণ সোসাইটি নামক একটি সংগঠনও আছে। এ সংগঠন থেকে এসব সাহেবজাদারা প্রতি মাসে ৪ থেকে ১৫০ রুপি পর্যন্ত ভাতা পান।
কোনো একসময় হায়দ্রাবাদের নিজামদের জাঁকজমক থাকলেও ১৯৫০ এর দশকে পর পতন ঘটে। নিজামদের একালের উত্তরসূরীদের অনেকেই এখন দিন এনে দিন খান। শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান তার সময়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ছিলেন। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংগঠন বা ট্রাস্টও। সেখান থেকে পাওয়া যায়।
আপনার নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তো, আপনার পরিবারের ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৮৫ ক্যারেটের একখানা হীরার টুকরা পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে গুজব আছে। ওই হীরার নাম ছিল জ্যাকব’স ডায়মন্ড। ১৯৩৭ সালে মীর ওসমান খান বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী হিসেবে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সে সময়ের হিসেবে তার সম্পদ ছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার। আজকের দিনে অবশ্য সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই, দশাতেই জীবন পার করতে হচ্ছে হায়দ্রাবাদের প্রথম থেকে ষষ্ঠ নিজামের বংশধরদের। আজকাল তাদের আগের মতো রমরমা নেই, বেশিরভাগই ছুটা কাজ আর ছোটখাটো ব্যবসা করে দিনাতিপাত করেন। নিজামদের দুনিয়াখ্যাত সম্পদের কথা এখন তাদের কাছে মলিন হয়ে যাওয়া স্মৃতি বই আর কিছু নয়।
শেষ হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে মোট সাহেবজাদা আছেন ৪,৫০০ জন। নিজামদের বংশধরদের সাহেবজাদা হিসেবে ডাকা হয়। এ বংশধরদের মজলিস-ই-সাহেবজাদাগণ সোসাইটি নামক একটি সংগঠনও আছে। এ সংগঠন থেকে এসব সাহেবজাদারা প্রতি মাসে চার থেকে ১৫০ রুপি পর্যন্ত ভাতা পান। কিছুদিন আগে হায়দ্রাবাদের ওল্ড সিটিতে একত্রিত হয়েছিলেন সংগঠনটির সদস্যরা। সেখানে বিরিয়ানি দিয়ে ভোজ সেরে তারা সবাই মিলে মীর রওনক ইয়ার খানকে তাদের নিজাম হিসেবে নির্বাচিত করলেন। সেদিন শামিয়ানার তলে পুরোনো দিনের গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে কেবল একটি বস্তুই উপস্থিত ছিল। সে জিনিসটি হলো কালচে খয়েরি বর্ণের রুমি টুপি, যা শোভা পেত মীর ওসমান আলী খানের শিয়রেও। সেকালে হায়দ্রাবাদে এ টুপি আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। আজকের দিনে অনেক সাহেবজাদাকেই অতীত ভুলে থেকে প্রতিনিয়ত নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়।
মীর সাজিদ আলী খানের কথাই ধরা যাক। সেদিনের মিলনমেলায় পরে এসেছিলেন একটা শার্ট ও প্যান্ট। বাম হাতটা প্যান্টের পকেটের ভেতর সযতনে আড়াল করা। জীবনের বেশিরভাগ সময় গাড়ির মেকানিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। কিন্তু বছর ১৫ আগে কাজ করার সময় আহত হন, তখন থেকেই শরীরের এক পাশ অচল। ৪০ বছর বয়সী সাজিদ আলী তিন সন্তানের জনক। এখন ছুটা কাজ করে সংসার চালান। প্রতি মাসে ট্রাস্ট থেকে বেতন হিসেবে ১৮ রুপি পান তিনি। বৃদ্ধ মীর সাঈদ-উদ-দ্বীন খান এখন ৬০এর কোঠায়। এক ছেলে সৌদিতে কাজ করে বলে তাকে আর কর্ম করে খেতে হয় না। সাঈদ খান মাসে ১৩৩ রুপি পান সংগঠন থেকে, তবে ওই অর্থ তোলার দরকার হয় না তার।
আমরা বছরে একবার এখানে নিজেদের অস্তিত্বের কথা ধরে রাখতে সবাই একত্র হই। এক সময়ে স্কুলে পড়াতেন ফাতিমা বরকত-উন-নিসা। শরীর না মানায় চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। ২০/২৫ রুপির জন্য ওল্ড সিটিতে আসা পোষায় না, বলেন তিনি। এক ট্যাক্সিভাড়াতেই চলে যায় হাজার রুপির মতো। তার কাছে জানা গেল, আরও অনেক সাহেবজাদা আছেন যারা অটো চালিয়ে বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবনযাপন করেন। নিজেদের অতীতের পরিচয় প্রকাশ না করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন তারা। ‘অনেকেই আছেন যাদের কাছে ট্রাস্টের দেওয়া অল্প পয়সাটাও খুব দরকারি। তাদের অবস্থা এমনই সঙ্গিন বলেন বরকত-উন-নিসা।
মজলিস-ই-সাহেবজাদাগণ-এর সদস্যদের আশা, কোনো একদিন তারা শেষ নিজামের বৈধ বংশধর হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন এবং হারানো জৌলুসের কিছুটা হলেও ফিরে আসবে। মীর ওসমান আলী খান নাকি দুটো ট্রাস্টে কোটি কোটি রুপি রেখে গেছেন, এমন কথা এখনো প্রচলিত। সংখ্যাটা কেউ বলেন দুই কোটি, কারও মতে নয় কোটি। ১৯৫০-এর দশকে এ অর্থের পরিমাণ বেশ মোটা হতো। আজকের দিনে এ উত্তরপুরুষদের জন্য শূন্য ভান্ডারই কেবল পড়ে আছে।