নারীরা মানসিকভাবে শক্তিশালী পুরুষের চেয়ে অসুখী: গবেষণা
নারীরা মানসিকভাবে শক্তিশালী পুরুষের চেয়ে অসুখী: গবেষণা
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে গবেষণা অনুসারে, বিষণ্নতা, ক্রোধ, একাকিত্ববোধ ও অপর্যাপ্ত ঘুমের মতো মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন নারীরা। গবেষণা বলছে, আগের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ও কাজের সুযোগ পাওয়ার পরও নারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার হার বেশি। একই প্রবণতা দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের নারীদের মধ্যে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বেশির ভাগ মার্কিন নারী অসুখী।
পরিবারের সন্তান ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভাল সাধারণত নারীরাই করেন। কর্মক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি নারীদের ওপর আরও বেশি গৃহস্থালি কাজ ও দেখভালের দায়িত্ব পড়ে যায়। তবে আরও বেশি লক্ষণীয় বিষয় হলো, নারীদের ওপর চাপ বেশি পড়লেও তাঁরা সেই বাধা উতরে যেতে পেরেছেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মানসিকভাবে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন।আবার অনেক নারীরা ঘর-সংসার ও চাকরি দুটোই সামলান। কর্মক্ষেত্রে ৫ ভাগের ৩ ভাগ নারীই নিপীড়ন, যৌন হয়রানি বা মৌখিক হয়রানির শিকার হন।
২০১৯ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। নারীর অভিযোজন ক্ষমতার পেছনে সামাজিক সংযোগ একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এমনকি নারীরা ব্যক্তিগত উন্নতি সাধনেও পুরুষের চেয়ে বেশি সক্ষম। কারণ হিসেবে দেখা যায়, নারীদের সহযোগিতা নেওয়ার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে বেশি। তাঁরা তুলনামূলক কম সময়ে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন, যার ফলে জলদি প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
নারীরা পুরুষের তুলনায় অধিক মূল্যায়ন করেন সামাজিক যোগাযোগের বিষয়টিও। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের বন্ধুত্ব তুলনামূলক বেশি অন্তরঙ্গ হয়। নারীরা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বেশি পছন্দ করেন, যার ফলে আত্মপ্রকাশের ক্ষমতা ও মানসিক সমর্থন বৃদ্ধি পান। এ তুলনায় পুরুষের বন্ধুত্ব সমান্তরালে কাজ করার ওপর নির্ভরশীল। পুরুষেরা একসঙ্গে কফি খাওয়ার চেয়ে এক সঙ্গে ফুটবল দেখা বেশি উপভোগ করেন।
সুখ বনাম ও উদ্দেশ্য:– নারীরা পুরুষের তুলনায় অসুখী বা বৃহৎ সামাজিক অসমতার শিকার হলেও গবেষণা বলছে, নারীদের জীবনে পুরুষের তুলনায় উদ্দেশ্য বেশি থাকে। অর্থবহ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যের চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দিলে নিজে বেশি সুখী না হলেও জীবনের অর্থবোধ থাকার সঙ্গে সুখের সম্পর্ক রয়েছে।
নতুন এই গবেষণা বলছে, নারীদের পরার্থপরতায় বা অন্যদের সহযোগিতা ও দাতব্য কাজে অংশ নেন বেশি, যার ফলে জীবনের অর্থবোধ ও উদ্দেশ্য সচেতনতা বাড়ে। গবেষকেরা এ-ও বলছেন, এ ধরনের প্রবণতা থেকে নারীদের নিজের চেয়ে অন্যের চাহিদা বা প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করার সামাজিক রীতি তৈরি হতে পারে। কিন্তু এটিই সামাজিক রীতিতে পরিণত হলে নারীদের অধিকার হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ থেকে বোঝা যায়, সুস্থতার জন্য নারীর নিজের জন্য সময় বের করা জরুরি। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে চারটি প্রমাণিত উপায় রয়েছে। গবেষণায় কার্যকর প্রমাণিত উপায়গুলো হলো—
থেরাপি:- মানসিক সুস্থতার জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট বৃত্তিকেন্দ্রিক থেরাপিগুলো নারীদের জন্য বেশ উপকারী। থেরাপি হলো শুধু নিজের জন্য একটা জায়গা, যেখানে নিজের অনুভূতি ও মানসিক অবস্থা প্রকাশ করা যায়। এ ধরনের থেরাপিতে নারীরা মন খুলে অন্য নারীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এর ফলে লজ্জা ও অবাঞ্ছিত হওয়ার মতো অনুভূতি কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো পেশাদারের সঙ্গে কথা বললে বেশি কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব।
ক্যালশিয়াম বেশি পাবেন যে খাবারে
প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা:- সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে নারীদের মানসিক আঘাত ও অসুস্থতা দ্রুত সেরে ওঠে। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটালে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য লাগতে পারে। নারীদের জৈবিক ক্রিয়া ও মূল্যবোধ প্রায়ই প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যায়। পৃথিবীকে ‘মা’ বলার প্রবণতায় নারীর সন্তান জন্ম দেওয়া ও যত্ন নেওয়ার গুণটিই প্রতিফলিত হয়। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে কাটানোর জন্য সময়ও রাখতে হবে। সমুদ্রতীরে হাঁটা, পার্কে গিয়ে বই পড়া এসবই মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কাজে দেয়। তাই নিজের আনন্দ ও সুস্থতার জন্যই বাইরে বের হতে হবে।
কায়িক শ্রম:- নারীরা নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁদের আত্মসম্মান বাড়ে এবং ব্যক্তিগত উন্নতি ঘটে, তাই যেভাবেই হোক ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটা, সাঁতার, সাইকেল চালানো ও দৌড়ানোর মতো ব্যায়ামগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর। লাফালাফি ও দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম মধ্যবয়সী নারীর হাড়ের সুস্থতা বাড়ে। নারীর মেনোপজের লক্ষণগুলো সারাতে হাঁটার মতো মাঝারি ব্যায়ামগুলো বেশ উপকারী।
মদ্যপান এড়ানো:- মদ্যপান সম্পর্কিত সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি নারীরা। নারীরা পুরুষের তুলনায় জলদি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়াও হৃদ্রোগ ও স্তন ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকিও থাকে। নারীরা যেহেতু পুরুষের তুলনায় অধিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাই নারীদের মদ্যপান এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। গবেষণাও বলছে, মদ্যপান ছেড়ে দিলে নারীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
Pingback: মমতাজের স্বামী মমতাজ ও আইনজীবী সবাই জেলে যাবে - Amader Khabar
Pingback: বিমানবন্দরে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা - Amader Khabar