বাঘের আনাগোনা বেড়েছে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে
বাঘের আনাগোনা বেড়েছে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে
বাঘের আনাগোনা বেড়েছে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলেছে। খুলনায় প্রাথমিক পর্যায়ে গণনার ভিত্তিতে বাঘ বৃদ্ধির আশা করছে বন বিভাগ। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কার্যকরী গণনার উপায় ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বিগত চার মাস ধরে সুন্দরবনে চলছে বাঘ গণনার কাজ। বনদস্যু মুক্ত, চোরাশিকার বন্ধে স্মার্ট প্যাট্রোলিং চালুসহ সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। বাঘের সংখ্যা ৪২৫টি দেখা যায় ১৯৮২ সালের জরিপে। সুন্দরবনের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৯৮৪ সালে জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি, ২০০৪ সালের জরিপে ৪৪০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ক্যামেরা ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে পরিচালিত ২০১৫ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১০৬টি। সবশেষ ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।
বন বিভাগ চলমান জরিপের বিষয়ে জানায়, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গণনা করা হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৩ মার্চ প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় একই সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘ স্থানান্তর, অন্তত ২ টি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং এর মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। এর বাইরে বন সুরক্ষার কাজও রয়েছে প্রকল্পটিতে।
বাঘ গণনায় ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজের উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি। একসঙ্গে ৪টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন পর্যটকরা, বাঘ বাড়ার বিষয়ে বনজীবী ও পর্যটকদের তথ্য ও ছবির ভিত্তিতে জানা যায়, গত বছরের ১২ মার্চ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে। তখন দর্শনার্থীদের দেখা এই বাঘের দৃশ্য ভাইরাল হয়। এবং গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বনরক্ষীরা কটকা এলাকায় একসঙ্গে ৩ টি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের একটি টহল ফাঁড়ি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে দখলে রেখেছিল তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর ফরেস্ট কার্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয় দুটি বাঘ। পরে সেখানে এদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও একটি বাঘ। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময় মোংলা, শরণখোলা, সাতক্ষীরাসহ লোকালয়ে বাঘের দেখা পেয়েছেন স্থানীয়রা।
মাফিয়া ডন বনাম জ্যাকি শ্রফ
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ওই দুই রেঞ্জে বাঘের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী। বিশেষ করে, খুলনা রেঞ্জে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে করা জরিপে বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বললেই চলে। সেই তুলনায় এবার খুলনা রেঞ্জে উল্লেখযোগ্য হারে বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিছু কিছু স্থানে বড় বাঘের সঙ্গে বাচ্চার ছবিও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১ নভেম্বর থেকে পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ -এর পরিচালক বলেন, বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ, একেক বাঘের একেক রকম। মূলত ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘের ছাপগুলো আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ ও গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে আগে যেসব জায়গায় বাঘের উপস্থিতি ছিল না, এখন সেসব জায়গায় বাঘের আনাগোনা পাওয়া গেছে। বনে পাচারকারী ও বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য কমে যাওয়া এবং বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে, যোগ করেন তিনি।
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। তবে ২০২৪ সালে বাঘ গণনার কার্যক্রম শেষ করা হবে। এর আওতায় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজও করা হবে। এর মধ্যে বাঘ গণনায় ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করা হব। এরপর শুরু হবে অন্যান্য কাজ।
সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি গ্রিডে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে ২০০টি সাতক্ষীরা রেঞ্জে ও ১৪০টি খুলনা রেঞ্জে ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ছয় মাস ঝড়বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় ক্যামেরা বসানোর কাজ বন্ধ থাকবে। ১৮০ শরণখোলায় এবং চাঁদপাইতে ১৪৫টি ক্যামেরা বসানো হবে। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে শুধু বাঘ নয়, বাঘের খাদ্য হিসেবে সুন্দরবনে অন্যান্য প্রাণী (হরিণ ও শূকর) কেমন আছে, সেটিও জরিপ করা হচ্ছে।