স্বাস্থ্য ও পুষ্টি

ফ্যাটি লিভারের খাদ্য তালিকা

মদ্যপান থেকে হোক বা না হোক, লিভার বা যকৃতে প্রয়োজনের বেশি চর্বি জমলে এই অভ্যাসটি একেবারে ত্যাগ করতে হবে।  উদ্বেগের বিষয় হল, সহজে এই অসুখের লক্ষণও বোঝা যায় না। ময়মতো সতর্ক না হলে ফ্যাটি লিভারের হাত ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে লিভার সিরোসিসের মতো রোগগুলো। অতিরিক্ত নুন বা লবন খান, ক্যানড ফুড খান, তাঁদের যকৃতে চর্বি জমার প্রবণতা বেশি। তাই অতিরিক্ত নুন পাত থেকে একেবারে বাদ।

ফ্যাটি লিভারের খাদ্য তালিকা

কয়েক দিন ধরে খেতে গেলেই বমি পাচ্ছে ভাব পেটটাও কেমন ফুলে রয়েছে, পাল্লা দিয়ে খাবারে অরুচি। সাত-পাঁচ না ভেবে ডাক্তারের কাছেই যাওয়ার রক্তপরীক্ষায় জানা গেল হেপাটিক স্টেটোসিস, অর্থাৎ ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছে। লিভার বা যকৃতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চর্বি জমে গিয়েছে।

ফ্যাটি লিভার

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, শারীরচর্চার অভাবে বেশ কয়েকটি অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে, যার মধ্যে অন্যতম ফ্যাটি লিভার। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, সহজে এই অসুখের লক্ষণও বোঝা যায় না। তাই সময়মতো সতর্ক না হলে ফ্যাটি লিভারের হাত ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে লিভার সিরোসিসের মতো রোগগুলো।

মূলত দু’ধরনের ফ্যাটি লিভার হয়, অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক। মদ্যপান থেকে লিভারে ফ্যাট জমলে সেটি অ্যালকোহলিকের পর্যায়ে পড়ে। আবার জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম থেকে হয় দ্বিতীয় ধরনটি, যেটি বেশি উদ্বেগের, কেননা কখনও কখনও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বংশগত হতেও পারে।

ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়

অসুখ ধরা পড়ল, শুরু হল ওষুধ আর চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন প্রয়োজন। ঠিক কী ভাবে কী ধরনের পরিবর্তন করা হবে? ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট অনন্যা ভৌমিকের মতে, অসুখ সারাতে প্রয়োজনীয় শারীরচর্চা যেমন দরকার, তেমন ডায়েটে পরিবর্তনও ভীষণ জরুরি। তার মানে এই নয় যে, যিনি মোটা তিনি রোগা হয়ে গেলেই ফ্যাটি লিভার সেরে হয়ে যাবে। ফ্যাটি লিভার সারানোর ডায়েট আর ওজন কমানোর ডায়েট সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ চর্বি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে যকৃতের উৎসেচক বা এনজ়াইমগুলোর ক্ষরণ স্বাভাবিক করে তোলা হয়। তাই অসুখটিতে আক্রান্ত হলে খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে যথাযথ পরামর্শ জরুরি।

ফ্যাটি লিভার ভালো রাখার উপায়

জীবনযাত্রার ধরন অনুসারে প্রত্যেক মানুষের খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট ভিন্ন হয়, এবং তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই খাদ্যে নিষেধাজ্ঞাগুলির মধ্যে মিল থাকে। কিন্তু ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে কোন খাবারগুলো বিষ, তা সহজেই বলা যায়।

 মদ্যপান নিষেধ: মদ্যপান থেকে হোক বা না হোক, লিভার বা যকৃতে প্রয়োজনের বেশি চর্বি জমলে এই অভ্যাসটি একেবারে ত্যাগ করতে হবে। তার কারণ, লিভার বা যকৃতে চর্বি জমার সঙ্গে মদ্যপানের সম্পর্ক সরাসরি।

 চিনিকে না বলুন:- চিনি বা শর্করা ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই সরাসরি চিনি বা চিনি যোগ করা রয়েছে এমন খাবার যেমন বিস্কিট, কুকিজ়, ক্যান্ডি, সোডা, নরম পানীয়, প্যাকেটজাত ফলের রস, মিষ্টি প্রভৃতি একেবারে এড়িয়ে চলুন।

 অতিরিক্ত লবন:- আগে আক্রান্তদের নুন বা লবন খাওয়ার উপর কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তবে পরে বড় গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা অতিরিক্ত নুন বা লবন খান, ক্যানড ফুড খান, তাঁদের যকৃতে চর্বি জমার প্রবণতা বেশি। তাই অতিরিক্ত নুন পাত থেকে একেবারে বাদ।

 ভাজাভুজি:- উচ্চ তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করে ভাজা খাবার একেবারে এড়িয়ে চলুন। # রেড মিট:- রেড মিট ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তদের জন্য একেবারে নিষেধ। কিন্তু মুরগির মাংসে সেই নিষেধাজ্ঞা নেই।

আরও পড়ুন: কচুতে কোন ধরনের পদার্থ থাকে

ফ্যাটি লিভার হলে কি কি খাওয়া যাবে

 সবুজ শাক সবজি ও ফল:- পাতে অবশ্যই রাখুন মৌসুমী শাক-সবজি ও ফল। অনেকে ভাবেন যে শুধু সবজি ও শাক খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়, পাতে ফলও রাখতে হবে।

বীজজাতীয় খাবার:- গোটা মুগ ডাল, গোটা মুসুর ডাল, অঙ্কুরিত ছোলা ও মুগ, মটরশুঁটি এই অসুখে ভীষণ উপকারী কেননা এগুলো ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি চা চামচের এক বা দুই চামচ করে সূর্যমুখীর বীজও খাওয়া যেতেপারে রোজ। সূর্যমুখীর বীজ নাপেলে এমনি ছোলা-মুগ-মুসুরেও একই কাজ হয়।

মাছ:- ফ্যাটি লিভারে উপকারী মাছ খাওয়ায়, মাছে কোনও অসুবিধে নেই। এখনতো বাঙালির মধ্যে মাছ খাওয়া অনেক কমে গিয়েছে। ছোট বা বড় মাছ, বিশেষ করে মাছের ছাল ভীষণ উপকারী। আবার পাশাপাশি খাওয়া যেতে পারে সামুদ্রিক মাছ ও।

 হলুদ ও রসুন:- নিয়মিত খাবারে রসুনের ব্যবহার যকৃতে চর্বি জমার প্রবণতা কমায়। পাশাপাশি সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদও খাওয়া যেতে পারে।

লেবু ও টক দই:- দিনে কয়েক বার গরম পানিকে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেই পানি খাওয়া যেতে পারে। ডায়েটে ভীষণ উপকারী টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।

 বাদাম:- প্রতি দিন ৩/৪ চামচ বাদাম খাওয়া ভীষণ উপকারী। কাজু, আমন্ডের মতো চিনাবাদামেও বেশ উপকার।

আরও পড়ুন: ডেউয়া ফলের উপকারিতা

ফ্যাটি লিভারের ব্যায়াম

অসুখ সারাতে প্রয়োজন ৭০ শতাংশ ডায়েট আর তিরিশ শতাংশ শারীরিক কসরত। দৈনন্দিন জীবনে এলিভেটরের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করলে, একটা বাসস্টপ হেঁটে গেলে অর্থাৎ একটু সচল হওয়ার অভ্যেস থাকলেই যথেষ্ট। যাঁরা দৌড়তে পারেন তাঁরা নিয়মিত দৌড়নো বা জগিংও করতে পারেন। নিয়মিত হাঁটা তো খুব ভাল অভ্যেস। এর পাশাপাশি রয়েছে যোগাসন। অসুখ যেমন আছে, তাকে সারানোর উপায়ও আছে। নিজের শরীরের ইঙ্গিত বুঝতে হবে, যত্ন করতে হবে, তা হলেই হাতে পাওয়া যাবে সুস্থতার চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *