জাতীয়

খালেদা জিয়ার আবেদনটি অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে

খালেদা জিয়ার আবেদনটি অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে

খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি। খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যদের আশা তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন। তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। হাসপাতালে কখনো তিনি কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। যার কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

গত সোমবার খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাখি সাওয়ান্তকে যে পরামর্শ দিলেন সানার স্বামী

আবেদন বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

আশাবাদী পরিবারের সদস্যরা, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি পাবেন। তাই তাঁরা বিশ্বের ৪ দেশে হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন। পরিবারের সদস্য আজ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তাঁরা খোঁজ নিয়েছেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। তাই তাঁরা ঐ দেশগুলোয় খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালের সন্ধান করছেন, যাতে তাঁরা অনুমতি পাওয়ামাত্র অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে পারেন।

চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে নেতিবাচক নানা কথা বললেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, সরকার চাইলে আদালতে না গিয়ে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে। খালেদা জিয়ার এখন যে অবস্থা, তাতে তাঁকে বাইরে নেওয়া জরুরি।

খালেদা জিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে বলে মনে করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।

মার্কিন ভিসানীতি শিকার যেসব দেশ

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও বলেন, এটি সরকারের বিবেচনার বিষয় বলেই তিনি উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও মুক্তি আদালতের নির্দেশে হয়নি। সরকার নির্বাহী আদেশে তা করেছে। সরকাকরের মন্ত্রীরা এখন আদালতের এখতিয়ারের যে কথা বললে সে বক্তব্য সঠিক নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ করেছিলেন। কিন্তু আদালতকে কিছু না জানিয়ে সরকার মানবিক দিক বিবেচনার কথা বলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির ২ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ, সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল।

এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। শেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

3 thoughts on “খালেদা জিয়ার আবেদনটি অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *