তথ্য ও প্রযুক্তি

সূর্যের ভেতরে চলছে পরমাণু কণিকাদের ভাঙ্গাগড়ার খেলা

সূর্যের ভেতরে চলছে পরমাণু কণিকাদের ভাঙ্গাগড়ার খেলা

পৃথিবীর আবহাওয়জনিত কারণেই শুধু ঝড় হয় না ঝড়ের হতে পারে সূর্যও। আসলে সূর্য একটা আস্ত নিউক্লিয়ার বোমা। সূর্যের ভেতরকার নিউক্লিয়ার বোমাটি পৃথিবীর নিউক্লিয়ার বোমার চেয়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ শক্তিশালী।

ক্রমাগত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে সূর্যের ভেতর। সূর্যের ভেতরকার হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস। হিলিয়ামগুলো আবার যুক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে আরও ভারী পরমাণু। এসব নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হচ্ছে প্রচণ্ড মাত্রার শক্তি। আবার সেই তাপ নতুন করে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার জন্য শক্তি জোগাচ্ছে। সূর্যের ভেতরে আসলে অনবরত চলছে পরমাণু কণিকাদের ভাঙাগড়ার খেলা। সবসময় এসব ঘটনা পৃথিবী থেকে দেখার উপায় থাকে না।

মাঝে মাঝে এই সব বড় বড় ঘটনা ঘটে, গোটা সৌরজগতকেও নাড়িয়ে দেয়। ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন সূর্যের পৃষ্ঠের দিকে একটা বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সেখান থেকে উদগীরণ ঘটেছিলে অসংখ্য আয়নিত কণাদের। [আয়নিত কণা কী জানতে পড়ুন ব্ল্যাকহোলের এই লেখাটি] তারপর পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল অর্থাৎ সূর্যের বুক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল চার্জি কণা।

সূর্যের বিস্ফোরণ থেকে ছিটক বেরুনো কণা পৃথিবীতে আসে ও সৌর ঝড় তৈরি করে। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে যে অরোরা হয়, তারও কারণ এই ঝড়। কিন্তু ২০০৩ সালে সূর্যপৃষ্ঠে বিস্ফোরণটা ঘটেছিল, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। আর এই বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীতে তৈরি হয়েছিল উপর্যপুরি সৌর ঝড়। এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে।

বিজ্ঞানীরা সেই বিস্ফোরণের ছবিকে রীতিমতো ঐতিহাসিক হিসেবে রায় দিয়েছিলেন। আর সেদিন যে সৌর ঝড় উঠেছিল পৃথিবীতে, তার নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছিলেন হ্যালোউইন ঝড়। হ্যালোইনের ঠিক ৩ দিন আগে ২৮ অক্টোবর সৌর ঝড়টি দেখা দিয়েছিল বলেও একে হ্যালোইন ঝড় বলা হয়। কারণ ছবিতে সূর্যকে সবুজ ও ভূতুড়ে দেখাচ্ছিল।

চিলমারী নৌবন্দরে ফেরি চলাচল বন্ধ

সেই ভূতুড়ে বিস্ফোরণটি ছিল বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ করা সবেচেয়ে তীব্র সৌর বিস্ফোরণ, যাকে বিজ্ঞানীরা ফেলেছিলেন এক্স-ক্লাস ফ্লেয়ারের কাতারে। সেই বিস্ফোরণ ফলে তৈরি ঝড়ের মাত্রা বোঝা যায় এর বিশালত্ব দেখে। যে জায়গাটা সেদিন সৌর পৃষ্ঠের বিস্ফোরিত হয়েছিল, সেটার আকার ১৩টা পৃথিবীর সমান, বিস্ফোরণের মাত্রা ৪৫। পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করা অর্ধেক স্যাটেলাইট তাদের অবস্থান থেকে বিচ্যূত হয়েছিল ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিজ্ঞানীরা তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচতে বাড়তি সুরক্ষা নিয়েছিলেন।

এই বিস্ফোরণের ফলে উদগীরিত আয়ন কণা প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছিল। এর প্রভাব পড়ে পৃথিবীর ভূ-চুম্ককের উপর তারই ফলে তিনদিন ধরে পৃথিবীতে চলে সৌর ঝড়। এই বিস্ফোরণে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে বেতার যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে ও কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও নষ্ট হয়। এ ধরনের ঘটনা যদি এখন ঘটত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এখন মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং সারা বিশ্বের যোগাযোগব্যবস্থা এসব স্যাটেলাইটের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল।

২০০৩ সালের ওই ‘হ্যালোইন’ ঝড় একটা পরিস্কার বার্তা দিয়ে রেখেছে আগামী কয়েক দশকে সূর্যে এরকম বড় বড়বিস্ফোরণের ঘটার পরিমাণ আরও বাড়বে।

তথ্যসূত্র:- Historic space photo: A monstrous ‘’Halloween storm’’ explodes from the sun/Live Science

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *