মিষ্টি কুমড়া রূপচর্চায়
এই সবজিকে পুষ্টিবিদেরা দিয়েছেন সুপারফুড টাইটেল। শীতের শাকসবজির মধ্যে অন্যতম মিষ্টিকুমড়া। অনেকেরই অজানা যে এই সুপারফুড চোখের জন্য বিশেষ উপকারী, আলফা ও বিটা ক্যারোটিন এবং জিংক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। মিষ্টিকুমড়ায় থাকা জিংক ও ভিটামিন ই ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফোলেট একধরনের ভিটামিন বি, যা চুলের ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে আর পটাশিয়াম চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
মিষ্টি কুমড়া রূপচর্চায়
মিষ্টিকুমড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার পাশাপাশি সূর্যের আলো এবং পরিবেশদূষণের ফলে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা সারিয়ে তুলতে পারে। মিষ্টিকুমড়ায় আছে ভিটামিন এ, সি, ই ও চার রকমের ভিটামিন বি (নায়াসিন, ফোলেট, রিবোফ্লাভিন, বি-সিক্স)। আরও আছে আলফা ও বিটা ক্যারোটিন এবং জিংক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। এই সব উপাদান গুলো ত্বকের জন্যই উপকারী এবং এটি বলিরেখা কমাতেও বেশ কার্যকর।
তৈলাক্ত ত্বক:-
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা সমাধানে মিষ্টিকুমড়ার জুড়ি মেলা ভার। কারণ, মিষ্টিকুমড়ায় থাকা জিংক ও ভিটামিন ই ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
১ টেবিল চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্পের ১ চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে মেখে ১০ থেকে পনের মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বক:-
মিষ্টিকুমড়া অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের শুষ্কতাও কমাতে পারে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বেশ সহায়ক। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন দুই রকমের মাস্ক।
প্রথম মাস্ক: ২ চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্প, আধা চামচ মধু, ১ চামচ দুধ।
দ্বিতীয় মাস্ক: ২ চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্প, ২ চামচ নারিকেল তেল।
মিশ্রণ গুলো ভালো করে মিশিয়ে ১৫–বিশ মিনিট মুখে লাগিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক ব্যবহারে শুষ্কতা দূর করে ত্বক করবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
আরও পড়ুন: নার্ভের সমস্যার সমাধান কি
অ্যান্টি এজিং:-
মিষ্টিকুমড়া খুব ভালো উৎস ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিনের। আবার ভিটামিন সি নিজেই একটি শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, এটি কোলাজেন বৃদ্ধি করে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। ত্বককে ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি, ফ্রি রেডিক্যাল বলিরেখা বা ত্বকের ক্যানসারের জন্য দায়ী। তাছাড়া বিটা ক্যারোটিনের সঙ্গে এক হয়ে সূর্যের ইউভি রশ্মির ফলে ত্বকে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।
ত্বকের বলিরেখা বা ইউভি রশ্মিজনিত সমস্যার সমাধানে কেবল ২ টেবিল চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্প, ১ চামচ ডিমের সাদা অংশ, আধা চামচ লেবুর রস এবং আধা চামচ মধু। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে তিন বার রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করুন।
ব্রণের সমস্যা:-
ব্রণের যম ভিটামিন বি ও জিংক, মিষ্টিকুমড়ায় এ দুই উপাদানে পরিপূর্ণ। তাই অনায়াসে ব্রণের সমস্যা ব্যবহার করতে পারেন মিষ্টিকুমড়ার মাস্ক। মাস্কটি বানাতে লাগবে, ২ চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্প, ২ চামচ টক দই, আধা চামচ ওটসের গুঁড়া, আধা চামচ মধু। মাস্কটি দশ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
চুলের যত্নে:-
চুলের ড্যামেজ কমানোর পাশাপাশি চুল পড়ার সমস্যা কমাতে, সুস্থ ও সুন্দর চুল পেতে মিষ্টিকুমড়ার দ্বারস্থ হতে পারেন। পটাশিয়াম আর ফোলেট আছে মিষ্টিকুমড়ায়। ফোলেট একধরনের ভিটামিন বি, যা চুলের ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে আর পটাশিয়াম চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই চুল পড়ার সমস্যা থাকলে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সাথে ১ চামচ মিষ্টিকুমড়ার রস মিশিয়ে সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করুন।
চুলের জন্য মিষ্টিকুমড়া খুব ভালো কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। দুই টেবিল চামচ মিষ্টিকুমড়ার পাল্পের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ জলপাই বা সূর্যমুখীর তেল, ২ চামচ ওটসের গুঁড়া এবং ১ ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন ডিপ কন্ডিশনার প্যাক। এই প্যাক মাসে দুবার ৩০ মিনিট করে গোসলের আগে ব্যবহার করলেই চলবে। এই প্যাকটি গভীর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে করবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
তথ্যসূত্র:-স্টাইল ক্রেজ.