অন্যরকম খবর

আনারস ও দুধের বিক্রিয়া

দুধ ও আনারস মিথস্ক্রিয়া করে শরীরের কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। কয়েকটি ইঁদুরকে খাইয়েছেন এবং পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন, আসলেই দুধ ও আনারসের মিশ্রণ ইঁদুরের শরীরে কোনো প্রভাব ফেলে কি না। কিন্তু না, কোনো ইঁদুর মারা যায়নি। দুধ ও আনারস মিশিয়ে খেলে অবশ্য পেট ব্যথা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। আনারস একসঙ্গে খেলে শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না বা মৃত্যু হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

আনারস ও দুধের বিক্রিয়া

দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে কি শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলে?

মা আমাদের শৈশবে দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেতে দিতেন না। আমাদের বাসায় দুধ থাকত সব সময় আনারস কিনলে মা দুধ রাখতেন আমাদের নাগালের বাইরে। আনারস খেয়ে আবার কী বিপদে পড়ি, সেই ভয়ে মা তটস্থ থাকতেন। কেননা তাঁরাও ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন, আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলে মৃত্যু অবধারিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বর্তমানে এমনটা দেখা যায় মাঝেমধ্যে। সেটা আপনারও চোখে পড়েছে হয়তো।

আসলে কি তাই?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। গবেষকেরা আনারস ও দুধ একত্রে মিশিয়ে বেশ কয়েকটি ইঁদুরকে খাইয়েছেন এবং পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন, আসলেই দুধ ও আনারসের মিশ্রণ ইঁদুরের শরীরে কোনো প্রভাব ফেলে কি না। কিন্তু না, কোনো ইঁদুর মারা যায়নি বা সামান্য ক্ষতিও হয়নি। অর্থাৎ, দুধ ও আনারস মিথস্ক্রিয়া করে শরীরের কোনো ধরনের ক্ষতি করে না।

যেকোনো মানুষের জন্য দুধ উপকারী। দুধ আসলে একটি আদর্শ খাবার, এতে থাকে প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট। এক কাপ গরুর দুধে প্রায় ১৪৯ ক্যালোরি শক্তি, প্রোটিন ৮ গ্রাম, ফ্যাট ৮ গ্রাম, ১২ গ্রাম কার্ব থাকে ও আনারসে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি, পাশাপাশি থাকে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস।

তবে দুধ ও আনারসের মিথস্ক্রিয়ায় আসলে কী হয়?

দুটি জিনিস হতে পারে এক, দুধ পরিণত হতে পারে দধি কিংবা দুই বা দুধ খেতে তেতো লাগতে পারে। এর কারণ, আনারসে থাকে ব্রোমেলাইন, যা এক ধরনের এনজাইম। এই এনজাইমের প্রভাবে প্রোটিন ভেঙে যায়, তাই আনারসের সঙ্গে দুধ মেশালে একটু তেতো লাগে। আবার আনারসকে যদি গরম করে দুধের সঙ্গে মেশানো হয়, তাহলে আর তেতো লাগবে না।

কিন্তু দুধআনারস মিশিয়ে খেলে অবশ্য পেট ব্যথা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। কারণ, আনারসে থাকে প্রচুর আঁশ যার কারণে হতে পারে পেটে ব্যথা। তবে এ পেটে ব্যথার সঙ্গে দুধের কোনো সম্পর্ক নেই। পেটে ব্যথা করতে পারে শুধু আনারস খেলেই।

আরও পড়ুন: শীত কালে ছেলেদের ত্বকের যত্ন

এখন প্রশ্ন, যেহেতু আনারস ও দুধের মিথস্ক্রিয়ায় বৈজ্ঞানিক ভাবে কোনো সমস্যা হয় না, তাহলে এ গুজব চালু হলো কখন বা কীভাবে? এ বিষয়ে বারডেমের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার [সাবেক] একটি প্রচলিত লোককাহিনির কথা বলেছেন। কাহিনিটা হলো অনেকটা এরকম যে, আনারস সাধারণত ঝোপঝাড়ের মধ্যে হয়। আবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় আনারস চাষ হলেও পাশাপাশি অনেকগুলো আনারস গাছ থাকলে মনে হয় ঝোপের মতো সেই ঝোপের মধ্যেই একবার এসে বসে একটি বিষধর সাপ। যে কোনোভাবে সেই সাপটি আনারসের গায়ে বিষ ঢেলে দেয়।

তারপর কেউ একজন সেখান থেকে আনারস কেটে নিয়ে যান নিজের বাড়িতে ও সেই আনারস খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শরীর বিষাক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঐ ব্যাক্তি তা টের পাননি। আনারস খাওয়ার পর পর মনের সুখে এক গ্লাস দুধও খান। কিন্তু ততক্ষণে বিষের প্রভাব শুরু হয়ে গেছে তার দেহে। তাই দুধ খাওয়ার মিনিট দুই এক পর মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, আনারস খেয়ে দুধ খাওয়ার কারণে তিনি মারা গেছেন। এভাবে মুখ থেকে মুখে ঘুরে ঘুরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এই লোককাহিনি কতটা সত্য, তা এখন আর নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না বা মৃত্যু হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

সূত্র:-হেলথ ডাইজেস্ট ডট কম.

2 thoughts on “আনারস ও দুধের বিক্রিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *