নিজেকে নিজে কাতুকুতু দিলে হাসি পায় না কেন
নিজেকে নিজে কাতুকুতু দিলে হাসি পায় না কেন?
কাউকে আপনি কৌতুক বলছ বা শোনাছেন, একের পর এক কৌতুক বলার পরও সে হাসছে না। মনে মনে সে ঠিক করেই রেখেছে, যত মজার কৌতুকই তাকে শোনাও না কেন, দাঁতকপাটি খুলবেই না। আর তাতেই প্রমাণিত হবে, সে বড্ড বেরসিক, এমন দুষ্টু বন্ধুটির সঙ্গে আপনি কী করবেন। কাতুকুতু দিয়েই শেষে তাকে হাসিয়ে ছাড়বো তাইতো।
কাতুকুতু দিলে ইচ্ছা থাক আর না থাক, হাসতে হবেই! আবার কাউকে তো কাতুকুতু দিতেও হয় না দূর থেকে হাত চালিয়ে দেখালেই হলো, হাসতে হাসতে তার পেটে খিল, থাক সেসব কথা।
একটি কথা ভাবোন তো অন্য কেউ কাতুকুতু দিলে তো ঠিকই হাসি পায়, নিজেকে নিজে কাতুকুতু দিলে পাই না কেন? কী অদ্ভুত কাণ্ড দেখো তাই না।
বুঝিয়ে বলি ব্যাপারটি, আমাদের শরীরের চামড়ায় কাঁঠালের রোয়ার মতো স্নায়ুকোষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই আমরা যখনই কারো ছোঁয়া পাই, ছুঁয়ে দেওয়া জায়গার স্নায়ুকোষ সেই খবরটি টুকে নেয় এবং পৌঁছে দেয় মগজে।
এতে কিন্তু লাভই আমাদের বেশি হয়। যেমন আগুনের তাপ পেলে সরে যেতে পারি, তাই শরীর পোড়ে না বা মশা, মাছির কামড় ও শুঁয়াপোকার ছোঁয়া লাগলেও সটকে পড়তে পারি।
তাহলে বুঝতেই পারছি সুড়সুড়ি বা কাতুকুতু কতটা দরকারি।
আসল কথায় আসি এবার, মশা-মাছি বা ঠাণ্ডা বা গমর তাপের ছোঁয়া আমরা বুঝতে পারলেও নিজেদের ছোঁয়া তেমন একটা বুঝি না। সারা দিনতো দেহের এখানে হাত রাখছি, ওখানে ছুঁয়ে দিচ্ছি। আঁচ করেও যেন আঁচ করছি না ব্যাপারটি কেন? কারণ আমাদের মগজের পেছন দিকে একটি অংশ আছে। যার নাম সেরেবেলাম। এসব নড়াচড়ার ঠিক খেয়াল রাখছে সেরেবেলাম।
এসব নড়াচড়া আমাদের দেহের কোনো অঙ্গই করছে সেরেবেলাম তা বুঝতে পারছে। ফলে সেরেবেলাম আমাদের ত্বকের সুড়সুড়ি বা কাতুকুতুকে প্রশমন করে দিচ্ছে। এতে কিন্তু লাভটা আমাদের হচ্ছে সারা দিনই যদি নিজের শরীরে নিজের হাত লেগে কাতুকুতু লাগত, কেমন হতো, ভাবো একবার। উঠতে-বসতে তো হেসেই কম্ম কাবার হতে হতো।
দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান প্রভাব গাছেরও
আবার বাইরে থেকে যখন আমাদের কেউ ছুঁয়ে দেয়, তখন ব্যাপার আলাদা। তখন সেরেবেলাম বুঝতে পারে বাইরে থেকে কেউ ছুঁয়ে দিয়েছে আমাদের। কেউ ছুঁয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মগজের আরো একটি অংশ সাড়া দিয়ে ওঠে, যার নাম সোমাটু সেন্সরি কর্টেক্স। আমাদের শরীরের চামড়ায় সোমাটু সেন্সরি কর্টেক্স সংকেত পাঠায়। ফলে শরীরের চামড়া বেশ সতর্ক হয়ে যায়, যে কারণে আমরা সুড়সুড়ি বা কাতুকুতু অনুভব করি।
আবার অন্যের হাতের ছোঁয়া পেয়ে আমরা হাসি কেন?
সোমাটু সেন্সরি কর্টেক্স তো আছেই, পাশাপাশি মগজের আরো একটি অংশ জেগে ওঠে, যার নাম অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স। মজাদার ছোঁয়া পেলেই শুধু জেগে ওঠে অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স। যার ফলে তুলতুলে কোনো কিছুর ছোঁয়া বা অন্য কারো হাতের ছোঁয়া পেলে আমাদের সুড়সুড়ি লাগেই, বেদম হাসিও পায়। নিজে নিজে কাতুকুতু দেওয়ার সময় এই সোমাটু সেন্সরি আর অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট ঘুমিয়েই থাকে।
সূত্র:- সায়েন্টিফিক আমেরিকান.কম।
Pingback: শাখা হয় না কেন তালগাছে - amaderkhabar
#
Thank U
****&^%$