অন্যরকম খবর

মানুষ শীতনিদ্রায় যায় না কেন

মানুষের শারীরিকভাবে শীতনিদ্রার প্রয়োজন হয় না। আরাম প্রিয় হন তো কথাই নেই, শীতকালে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে কার না ভালো লাগে। শীতকালটা ঘুমিয়ে কাটায় অনেক প্রাণীই। আর যাকে বলে হাইবারনেশন।  মানুষ শীতনিদ্রায় যায় না বরং শীতের দিনে শীতটাকে নিজেদের মতো করে উপভোগ।

মানুষ শীতনিদ্রায় যায় না কেন

আপনি যদি একটু আরাম প্রিয় হন তো কথাই নেই, শীতকালে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে কার না ভালো লাগে। শীতকালটা ঘুমিয়ে কাটায় অনেক প্রাণীই। আর যাকে বলে হাইবারনেশন। এভাবে মানুষের ঘুমাতে পারলে ভালো হতো, হয়তো ভাবেন অনেকে। চাইলেও কিন্তু সেটা সম্ভব নয়, কারণ শীতনিদ্রা মানুষের জন্য নয়।

প্রশ্ন হলো, কেন?

সারাদেশে হঠাৎ করেই শীত জাঁকিয়ে বসেছে পুরোদমে। মৃদু শীত বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া, শীতের তীব্রতা যত বাড়ে, ততই কঠিন হয়ে পড়ে জীবনযাত্রা। তবে এটা কেবল মানুষের জন্য না, প্রকৃতির সবকিছুর জন্যই।

দিনের দৈর্ঘ্যও কমে যায় শীতকালে। আবার দিনের দৈর্ঘ্য খানিকটা কমে যাওয়ার কারণেই শীত পড়ে। তবে ঋতুর পুরো বিষয়টাই দিনের দৈর্ঘ্যনির্ভর। উত্তর গোলার্ধে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই ৩ মাসে দিনের দৈর্ঘ্য থাকে সবচেয়ে কম। আবার এ সময় সূর্যের আলোর তীব্রতাও কম থাকে। এ কারনে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে (বাংলাদেশ এ গোলার্ধেই পড়েছে) শীত পড়ে। বিপরীত ঘটনা দক্ষিণ গোলার্ধেও ঘটে জুন থেকে আগস্ট, এই ৩ মাসে।

আরও পড়ুন: হাতির ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় কি কি

আসলে এ সময় সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠকে যথেষ্ট উষ্ণ রাখতে পারে না। এবং গাছেরাও পর্যাপ্ত খাদ্য তৈরি করতে পারে না। উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের দেহ উষ্ণ রাখার জন্য দরকার হয় অতিরিক্ত শক্তির, চাই বাড়তি খাবার। আবার বাড়তি খাবারের জন্য প্রয়োজন চলাচল। এ ক্ষেত্রে আরও শক্তির প্রয়োজন।

কিন্তু সাপ বা ব্যাঙের মতো শীতল রক্তের প্রাণীরা চাইলেই নিজেদের উষ্ণ করে তুলতে পারে না। এদের দেহের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। ফলে শীতকালটা বেঁচেবর্তে পার করার জন্য শীতল বা উষ্ণ রক্তের অনেক প্রাণীই হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় চলে যায়। তাদরে দেহের অভ্যন্তরীণ কার্জক্রম প্রায় শূন্য হয়ে থাকে শীতনিদ্রায় থাকার সময়। যার ফলে খুব অল্প পরিমাণ শক্তি খরচ হয়, তাদের দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকলেও শারীরিক জটিলতায় পড়তে হয় না ও বেঁচে থাকা সহজ হয়।

তবে মানুষের শারীরিকভাবে শীতনিদ্রার প্রয়োজন হয় না। কারণটা বোঝা তেমন কঠিন নয়। সেই প্রাচীনকালেই মানুষ নিজেরা বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে শীত মোকাবেলা করার উপায় আবিষ্কার করেছে, যেমন আগুনের উত্তাপ বা শিকার করা পশুর ছাল উষ্ণ রাখত ব্যবহার করত। খোলা পরিবেশ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আশ্রয় নিয়েছে গুহার উষ্ণ পরিবেশে, কালের আবর্তে তৈরি করেছে বাড়িঘর বা যুগে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কাপড় আবিষ্কার। তাছাড়াও সেই আদিকাল থেকেই খাবার সংগ্রহের জন্য কৃষি বা শিকার। সবমিলিয়ে মানুষের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য কখনো শীতকালটা ঘুমিয়ে কাটানোর প্রয়োজন হয়নি। বরং মানুষ শীতনিদ্রার চেয়ে আরও কার্যকর উপায়ে শীতকে বশ করতে শিখেছে।

আরও পড়ুন: সব ভূমিতে কেন তেল বা মূল্যবান খনিজ পাওয়া যায় না

আবার আমাদের বিপাকতন্ত্রও শীতনিদ্রার উপযোগী নয়। অর্থাৎ মানুষ ঘুমিয়ে থাকলেও শরীর ও মস্তিষ্কে নানা কাজকর্মের সক্রিয় থাকে। তাই এসব কাজকর্মের জন্য শক্তি প্রয়োজন। অন্য সব প্রাণীর মতো খুব অল্প শক্তিতে; আমাদের দেহ দীর্ঘসময় ঠিকভাবে টিকে থাকতে পারে না। যার কারণে মানুষ শীতনিদ্রায় যায় না বরং শীতের দিনে শীতটাকে নিজেদের মতো করে উপভোগ।

সূত্র:-সায়েন্স ফোকাস/ ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *