অন্যরকম খবরতথ্য ও প্রযুক্তি

ভেবে দেখেছেন ক্ষুধা জিনিসটা আসলে কী

ভেবে দেখেছেন ক্ষুধা জিনিসটা আসলে কী

চোখের ক্ষুধা যেমন আছে, আছে মনের ক্ষুধাও ক্ষুধার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম। সব মানুষের মধ্যে কমন ক্ষুধা হলো সত্যিকারের ক্ষুধা, যেটা খাবারের অভাবে পায়। তখন পেটে মোচড় দেয়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, মাধা ঝিম ঝিম বা শরীরে কাঁপুনিও এসে যেতে পারে।

ক্ষুধা শুধু খাবারের অভাবেই লাগে না। চোখের ক্ষুধা ও মনের ক্ষুধার কথা বলেছি। অর্থাৎ লোভনীয় কোনো খাবার দেখলে আপনার ক্ষুধা লাগতে পারে বা সুস্বাদু খাবারের গন্ধও আপনাকে ক্ষুধা পাইয়ে দিতে পারে।

আবার নিয়ন্ত্রিতও হতে পারে ক্ষুধা সময়। ধরা যাক, আপনি রাতের খাবার খান রাত ১০ টায়। প্রতিদিন ঐ সময়ে আপনার ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। এমনকী শরীরে খাদ্যের প্রয়োজন না হলেও ঐ সময় ক্ষুধা পেয়ে যেতে পারে।

দেহঘড়ি আমাদের শরীর সময় মেনে চলে অভ্যস্ত। শারীরবৃত্তীয় অনেক কার্যক্রম, অনেক হরমোন একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর সক্রিয় হয়ে ওঠে। আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাবেন, তখন প্রতিদিন ঐ সময় ক্ষুধার সঙ্গে জড়িত হরমোনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে, খাবারের প্রয়োজন না হলেও  ক্ষুধার অনুভব তৈরি করেন।

গোলমরিচের উপকারিতা

যে ক্ষুধার সঙ্গে আমাদের নিত্য উঠাবসা, একবারও ভেবে দেখেছেন কী, ক্ষুধা জিনিসটা আসলে কী? কেনইবা ক্ষুধার এই প্রভাবটা দেখা যায়?

আগে আসা যাক, ক্ষুধা কেন লাগে সেই ব্যাপারটাতে।

আমাদের শরীরটা আসলে একটা জৈবরাসায়নিক ইঞ্জিন। যেমন গাড়ি বা কলকারখানার ইঞ্জিন চালাতে গেলে জ্বালানির দরকার হয়, শরীরেও তেমন জ্বালানি প্রয়োজন। আর সেই জ্বালানিটা হলো খাদ্য। শরীর সক্রিয় থাকার জন্য শক্তি প্রয়োজন, সেই শক্তির জোগান খাদ্য থেকে।

তবে ক্ষুধার যে অনুভূতি, সেটার জন্ম কোথায় বলুন তো?

পেটে নয় মস্তিষ্কে, আসলে মানুষের সকল অনুভূতির জন্ম মস্তিষ্কে। শরীরের ব্যাথা-বেদনাটা ঠিক কোথায় সেটা আপনাকে মস্তিষ্কই জানান দেয় । যার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে আমাদের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়বিক কার্যকলাপ।

মানুষের শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু হলো ভ্যাগাস নার্ভ। যার অন্যতম প্রধান কাজ হলো পেট ও পুষ্টির দিকে নজর রাখা। এই ভ্যাগাস নার্ভ জানিয়ে দেয়, পেট কতখানি খালি আর আপনার পাকস্থরিতে কী পরিমাণ পুষ্টি আছে সে খবর মস্তিষ্কে খবর পাঠিয়ে দেয়। ভ্যাগাস নার্ভ তথ্য মতে, মস্তিষ্ক তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে।

পেটে মোঁচড় দেয় ক্ষুধা পেলে, এক ধরনের গুড়ু গুড় শব্দ তৈরি হয়। কেন এমনটা হয়? খাবার খাওয়ার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কোনো সমস্যা হয় না। তবে খাদ্য সংশ্লেষনের পর যখন পেটের খাদ্য প্রায় ফুরিয়ে আসে তখন বাকি খাদ্যটুকু ঝেঁটিয়ে বা চেঁছে-পুছে নিতে শুরু করে পাকস্থলি। তখন পাকিস্থলি সংকুচিত হয়ে অবশিষ্ট খাবারটুকু শোষণ করে। যার ফলে পেটের ভেতর শব্দ তৈরি হয়।

শাখা হয় না কেন  তালগাছে

আমাদের পাকস্থলিতে কিছু হরমোন তৈরি হয় যে গুলো আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি তৈরিতে সাহায্য করে। এদের নাম ঘ্রেলিন ও লেপটিন। এই ২ টি হরমোন পাকস্থলির কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। যখন রক্তে এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় মস্তিষ্ক বুঝে নেয় খাওয়ার সময় হয়েছে। তাতেই ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে। এই হরমোন গুলো শরীরের মেদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। আবার অন্যদিকে লেপটিন হরমোনের ভূমিকা ঘ্রেলিনের উল্টো। এই হরমোন রক্তে নিঃসৃত হলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে পেট ভর্তি আছে এখন খাওয়া চলবে না।

দুই হরমোনের অনুপাত কম-বেশির উপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক বুঝে যায়, কখন ক্ষুধা পাওয়া উচিৎ আর কখন পেট ভরা। তাছাড়াও রক্তে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড বা ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘনত্বের উপরও ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি হওয়া নির্ভর করে। এই সকল পুষ্টি উপদানের ঘনত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, তখন ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি হয়। আসলে এগুলোই সত্যিকারের ক্ষুধার মূল কারণ।

 

সূত্র:- বিবিসি সায়েন্স ফোকাস.

4 thoughts on “ভেবে দেখেছেন ক্ষুধা জিনিসটা আসলে কী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *