পিঁপড়েরা পশুপালন করে
পিঁপড়েরা পশুপালন করে
মানুষ কিন্তু পৃথিবীর প্রথম কৃষক নয়, তাহলে কে? সবচেয়ে পুরোনো সামাজিক প্রাণী যারা, তারাই। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মানুষ, বেশি দিন আগের কথা নয়। এর সত্যতা প্রাণীদের ইতিহাসের দিকে তাকালেই বুঝযায়। মানবসভ্যতা প্রায় ৫কোটি বছর আগে থেকেই খুদে প্রাণীটা রাজত্ব করছে পৃথিবীতে। নেতৃত্বে থাকে রানী আরও থাকে রানীর ছেলে-মেয়ে আর রাজা। তাদের খাবার বা আরাম আয়েশের বন্দোবস্ত করতেই দিন চল যায় কর্মী বাহিনীর।
আবার নিজেদের খাবার-দাবার জোগাড় করা তো আছেই। এজন্য মানুষ যেমন, সভ্যতার শুরুতেই পশুপালন করে প্রথম কৃষি কাজ শিখেছিল, এই প্রাণীটিও পশুপালন করে। সামান্য পতঙ্গ তাদের পশুগুলো তো আর গরু-ছাগলের মতো বিশাল প্রাণী হবে না। খুদে একরকম পোকাদের লালন- পালন করে এরা। তারা উদ্ভিদেরও চাষ করে সাধারণ উদ্ভিদ নয়, এক ধরনের ছত্রাকের।
খুদে এক প্রাণী, কিন্তু অসীম ক্ষমতা এদের। বলছিলাম পিঁপড়েদের কথা।
খুদে প্রাণী পিঁপড় নিজের ওজনের চেয়ে বহগুণ ওজনের বস্তু বয়ে নিতে পারে। পিঁপড়েরা এই পৃথিবীর প্রায় নব্বই ভাগ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মৃত কীট-পতঙ্গের সৎকার করে।
পেঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বলে কেন
পিঁপড়েরা নিজেদেরই বা রক্ষা করে কীভাবে?
পৃথিবীত ‘গিভ অ্যান্ড টেকে’র খেলা চলে অহরহ। যেমন কোনো পশু আমরা তখনই পুষি, তা থেকে মাংস বা দুধ পাওয়ার সম্ভাবনা যখনই, বা যদি পশুটা ভারবাহী বা পাহারাদার টাইপের হয়। আমরা সেই সব উদ্ভিদেরই চাষ করি, যেগুলো থেকে খাদ্যশস্য বা অর্থকরী ফসল পাওয়া যায়। নিশ্চয়ই পিঁপড়েরাও তেমনটাই করে। গবেষক যুধাজিৎ দাশগুপ্ত (পশ্চিমবঙ্গ) ছলনার আট পা এবং অন্যান্য’ বইয়ে স্টোরিটা পেলাম পিঁপড়েদের নিয়ে।
তিনি লিখেছেন, পিঁপড়েরা মিলিবাগের জন্য নাকি বাসায় বানিয়ে দেয়, আবার সুরক্ষা দেয়। বদলে মিলিবাগের শরীর থেকে নির্গত বর্জ্যপদার্থ নিজেদের করে নেয় পিঁপড়েরা। সেই বর্জ্য পদার্থের ভেতরে কিছুটা মিষ্টি রস থাকে। সেই মিষ্টি পিঁপড়ে রস মজা করে খায়। আমরা যেমনই গুরুর দুধ পান করি, এজন্য গুরুকে লালন-পালন করি।
পোকাটা ক্ষতিকর ডালের পাতা আর কান্ড থেকে রস চুষে খায়। ডালপালা, কুড়ি, ফুল ফল কিছুই এর হাত থেকে রেহাই পায় না পোকাটার নাম মিলিবাগ। তাদের আক্রমণে গাছপালা একেবারে ধ্বংস করে ফেলে। গাছের গায়ে কামড়ে থাকে নড়াচড়া করে খুব কম। যদিও-বা করে, এদের হাঁটার গতি অত্যন্ত শ্লথ। এদের দেখে মনে হয় না খুব চালু পোকা। এদের দেখভাল করে ও শত্রুর হাত থেকে বাঁচায় পিঁপড়েরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে বয়ে নেওয়ার কাজও করে পিঁপড়েরা। পিঁপড়েরা এদের ডিম আর ছানার সুরক্ষাও নিশ্চিত করে আবার বানিয়ে দেয় সুরক্ষিত বাসায়।
পৃথিবীর প্রথম কৃষক হিসেবে পিঁপড়েদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন যুধাজিৎ দাশগুপ্তই। তিনি বলেছেন দক্ষিণ আমেরিকার পাতাকাটা পিঁপড়েরা করে ছত্রাকের চাষ। পাতাকাটা পিঁপড়েদের গাছের পাতা কী কাজে লাগে, নিশ্চয়ই এরা পাতা খায় না তাহলে।
গাছেরা কি জানে কখনো ফুল ফোটাতে হবে
আসলে তারা পাতাগুলো জমা করে নিজেদের বাসার ভেতর। আর কিছুদিন পর পাতা পচে যায়, তখন সেই পাতার ওপর ছড়িয়ে দেয় বিশেষ এক জাতের ছত্রাকের বীজ। সেই ছত্রাকদের দারুণ পছন্দের এই পচা পাতা। তখন ছত্রাকগুলো পচা পাতায় বেড়ে ওঠে, এক সময় সেই ছত্রাকের বীজ হয়। সেই বীজ পিঁপড়ের ছানাদের খুব প্রিয় মজা করে খায় সেগুলো।
পোকাপালন বা ছত্রাক চাষের এ ঘটনা পিঁপড়েদের কিন্তু আজকের নয়। কোটি কোটি বছর ধরে এটা করছে পিঁপড়েরা। তাই এদেরেকেই পৃথিবীর প্রথম চাষী বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবেনা।
সূত্র:- Ants independently evolved to farm fungus at least twice/New Scientist.
🐜🐜🐜🐜🐜🐜🦟🦟🦟🦟🦟🦟
thank u
Pingback: চাতক পাখি পানি খায় না সত্যি কি ? - amaderkhabar