সূর্য কেন মহাকাশের ঘাম ঝরাতে পারে না
মহাশূন্য কেন উষ্ণ হয় না বা সবসময় শীতল থাকে কেন? সেখানকার গড়ে আবহাওয়া ২ দশমিক ৭ কেলভিন বা মাইনাস ২৭০.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মানুষের তৈরি পার্কার সোলার প্রোব ২০২৩ সালের অক্টোবরে সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়েছে, নভোযানটি সূর্যের প্রায় ৭২ লাখ কিলোমিটারের মধ্যে চলে যায়।
সূর্য কেন মহাকাশের ঘাম ঝরাতে পারে না
আমাদের দেশের প্রকৃতি বর্তমানে বেশ ঠান্ডা। এবং এই মুহূর্তে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ বছরের অন্য সময়ের তুলনায় সূর্য থেকে অনেকটা দূরে রয়েছে। আাবার পৃথিবী নিজের ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে হেলে আছে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে। তাই বছরের এই সময়টায় দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের আলো কম পড়ে হেলানো অবস্থানের কারণে, অর্থাৎ দিন ছোট হয় ও রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠ পর্যাপ্ত তপ্ত হতে পারে না।
কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার [জুন-জুলাই মাসে] পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে চলে যাবে এবং বাড়বে দিনের দৈর্ঘ্য ও গরমের তীব্রতা। প্রচণ্ড গরমে ফেটে চৌচির হয়ে যাবে মাঠ-ঘাট। সূর্য প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীর ঘাম ঝরিয়ে ছাড়ে।
প্রশ্ন তাহলে, দূর থেকে পৃথিবীর এ অবস্থা করলেও সূর্য কেন মহাকাশের ঘাম ঝরাতে পারে না। অর্থাৎ মহাশূন্য কেন উষ্ণ হয় না বা সবসময় শীতল থাকে কেন?
আরও পড়ুন: পৃথিবী সৌরজগত সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ
আমরা জানি, মহাশূন্য শীতল ও ভীষণ ঠান্ডা। সেখানকার গড়ে আবহাওয়া ২ দশমিক ৭ কেলভিন বা মাইনাস ২৭০.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সূর্য প্রচণ্ড গরম, তবে বিভিন্ন স্তরে রয়েছে তাপমাত্রার পার্থক্য। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস ও পৃষ্ঠ বা ফটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা মাত্র সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ফটোস্ফিয়ারের একটু বাইরে, অর্থাৎ করোনা বা সবচেয়ে বাইরের অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, মহাকাশ কেন উষ্ণ নয়? প্যারাডক্স বা হেঁয়ালির মতো এই প্রশ্নটি আসে সাধারণত সূর্যকে আগুনের গোলা হিসেবে চিন্তার কারণে। সাধারণত আমরা ধরে নিই, আগুনের তাপ যেমন কোনোকিছু তপ্ত করে, সূর্যও ঠিক একইভাবে পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহকে তপ্ত করে, আসল ঘটনা ঠিক এমন নয়। বিশেষ করে গ্রহ-উপগ্রহ এভাবে উষ্ণ হয় না, তাপের পাশাপাশি এতে বড় ভূমিকা রাখে নানা ধরনের বিকিরণও।
তাই আমরা পৃথিবীতে যে তাপ অনুভব করি, তার পুরুটা সূর্য থেকে তাপশক্তি আকারে আসে না। যেমনটা আগে বলা হলো, সূর্য থেকে নির্গত নানা বিকিরণ এই তাপের পেছনে দায়ী। যেমন বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের প্রায় সব বর্ণালীই সূর্য থেকে বিকিরিত হয়। যার দৃশ্যমান আলো অন্যতম। আমাদের এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও ভূত্বকের বিভিন্ন কণা এদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ে ও সেখান থেকেই তৈরি হয় তাপ। প্রতিনিয়ত এভাবে আমরা তাপ উৎপাদন করি। যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সেখানে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গের সাহায্যে পানির কণাগুলোকে গতিশীল করা হয়, কণার এই গতিশীলতার কারণে তৈরি হয় তাপ। তাই সূর্য অনেক দূরে হলেও পৃথিবী বেশ উত্তপ্ত হয়।
যেহেতু মহাশূন্যে অণু-পরমাণুর সংখ্যা প্রায় শূন্য, তাই সেখানে খুব বেশি মিথস্ক্রিয়া হয় না বা বিকিরণ থেকে তাপও তেমন তৈরি হয় না। তাইা সৌরজগতের শূন্যস্থানে তাপমাত্রা থাকে ভীষণ কম। যার কারণে মহাশূন্যে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকলেও তাপমাত্রা খুব কম। আবার নভোযানে চড়ে সূর্যের কাছে গেলেই কিন্তু ঠান্ডা অনুভব করবেন না, সূর্যের আশপাশে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়। কিন্তু সূর্যের বিকিরণের সংস্পর্শে এসে ঠিকই উত্তাপ অনুভব করবেন। অর্থাৎ কোনো পদার্থ বিকিরণের; সংস্পর্শে এলে উত্তপ্ত হবে।
আরও পড়ুন: ক্যামেরায় কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়
এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি পার্কার সোলার প্রোব ২০২৩ সালের অক্টোবরে সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়েছে, নভোযানটি সূর্যের প্রায় ৭২ লাখ কিলোমিটারের মধ্যে চলে যায়। এবং নভোযানটি এ সময় প্রায় ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে। কিন্তু এটা ছিল পার্কারের বাইরের তাপমাত্রা ভেতরের যন্ত্রপাতিতে স্বাভাবিক তাপমাত্রাই ছিল। যা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
সূত্র:- উইকিপিডিয়া,আইএফএল সায়েন্স.
Pingback: বারকোড রিডার এর কাজ কি - amaderkhabar