তথ্য ও প্রযুক্তি

ক্যামেরায় কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়

ডিজিটাল ক্যামেরায় ফটোইলেকট্রিক সেন্সর থাকে এবং এই সেন্সরের কাজই হলো, আলোক তরঙ্গকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তর করা। চতুষ্কোণ ছবি দেখতে আমরা যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, গোলাকার ছবিতে ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা না। লেন্স থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ আদায় করে নিতেই গোলাকার করে তৈরি করা হয়। ইমেজ সেন্সর বা ফিল্মের আকার চতুষ্কোণ হওয়ার কারণে আমরা পাই চারকোণা ছবি।

ক্যামেরায় কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়

ক্যামেরায় তোলা ছবি আসলে কী, একদম সহজ করে বলা লেন্সের মধ্য দিয়ে আলো এসে পড়ে সেই আলোটাকে আমরা ছবি হিসেবে দেখি। অথচ ক্যামেরা দেখতে যেমনই হোক, লেন্সটা সবসময় গোল হয় যেমন ফোনের ক্যামেরা, টিভি ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার। কিন্তু ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললে বা ভিডিও চিত্র ধারণ করলে সেটা হয় চারকোনা। আলোটা, যেহেতু গোলাকার পথ দিয়ে আসছে, হিসেব মতো ছবি দেখতেও তো গোল হওয়ার কথা? কিন্তু কেন হয় না? কেন ছবি সবসময় চারকোনা হয়?

উত্তরে এক কথায় বলা যায়, ইমেজ সেন্সরের কারণে। আধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরায় ফটোইলেকট্রিক সেন্সর থাকে এবং এই সেন্সরের কাজই হলো, আলোক তরঙ্গকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তর করা। তবে এই ইমেজ সেন্সর হয় চতুষ্কোণ বা চারকোনা আকারের। এখানে আলো যেভাবেই সেন্সরে এসে পড়ুক না কেন, ছবি হয় চারকোনা। আবার প্রশ্ন আসতে পারে ইমেজ সেন্সর কেন গোল হয় না? এরও কারণ আছে।

চতুষ্কোণ কিছু তৈরির করার চেয়ে গোলাকার কিছু তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন ও ব্যয়বহুল। যেমন জ্যামিতির নানা চিত্র আঁকার সময় হয়তো নিজেই বিষয়টি খেয়াল করেছেন। একটি স্কেল দিয়েই যেখানে সহজেই চমৎকার আয়ত বা বর্গক্ষেত্র আঁকা সম্ভব, সেখানে আবার বৃত্ত আঁকার জন্য প্রয়োজন ভালো একটি কম্পাসের। একটু নড়ে গেলেই সেটা আর বৃত্ত হবে না। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে অবশ্য ক্যামেরার সেন্সর তৈরির ক্ষেত্রে এটা খুব বড় সমস্যা নয়, তবে কিছু সমস্যা আছে।

আগের দিনের ক্যামেরার কথা একটু জেনে নেওয়া যাক। ঐ সব ক্যামেরায় সেলুলয়েড ফিল্ম থাকত, ছবিটা আসত এই ফিল্মে। ফিল্মটা থাকত রোল করা, একটা চারকোনা ফিল্মের চেয়ে গোলাকার ফিল্ম পেঁচিয়ে রাখা কতটা কষ্টকর এটা বোধ হয় কল্পনা করা কঠিন নয়।

এছাড়াও অভ্যস্ততার বিষয়ও আছে। চারকোনা ছবি দেখতে আপনি যতটা অভ্যস্ত, গোলাকার ছবিতে কি ততটা অভ্যস্ত? মানুষ প্রথম ছবি আঁকতে শুরু করে প্রাচীনকালেই। তখনকার ছবি তারা আঁকত সমতল, চতুষ্কোণ ক্যানভাসের উপরে। তাই সব মিলিয়ে চতুষ্কোণ ছবি দেখতে আমরা যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, গোলাকার ছবিতে ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা না।

আরও পড়ুন: মৌমাছি সম্পর্কে অজানা তথ্য

আরেকটি বিষয়, সেন্সর গোল করে বানালে গোল লেন্স থেকে কিন্তু গোলাকার ছবিই তৈরি হতো। এবং ছবির কেন্দ্রের চারপাশের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে ছবিটা স্পষ্ট থাকত। কিন্তু গোলকার ছবির কোনার অংশগুলোতে আলো নানাভাবে বেঁকে যায় ও অস্পষ্ট, ঝাপসা একটা ভাব তৈরি হয়। আবার অংশগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে, ঠিক করে নেওয়া যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তারচেয়ে স্পষ্ট অংশটিকে বেছে নিয়ে, সেটাকে চারকোনা করে কেটে [অর্থাৎ ক্রপ করে দেখানোটা কম খরুচে এবং সহজ]। এই সব বিষয় মিলেই চারকোনা সেন্সরের দিকে ঝুঁকেছে মানুষ। চারকোনা সেন্সর তৈরিতে অপচয় অনেক কম হয়।

বর্তমানে যদিও ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা ব্যবহার করে গোলকাকৃতির ছবি তোলা যায়, তবে সেটা ভিন্ন প্রযুক্তি, ভিন্ন বিষয়।

কিন্তু সেন্সর বা ফিল্ম যেখানে চারকোনা, সেখানে লেন্স কেন গোলাকারভাবে তৈরি করা হয়? আলোর গতিপথকে কিছুটা বাঁকিয়ে দেওয়া মূলত লেন্সের কাজ। এবং এই বাঁকানোর মাধ্যমে লেন্স বিস্তৃত পরিসরের আলো নির্দিষ্ট ফোকাস বিন্দুতে ফেলতে পারে। আলোকবিজ্ঞান থেকে দেখা যায়, লেন্স গোলাকার হলেই সেটা সবচেয়ে ভালো কাজ করে। চতুষ্কোণ বা অন্য কোনো আকারের লেন্স কর্মদক্ষতায় অনেক পিছিয়ে থাকে। আবার চতুষ্কোণ লেন্স তৈরি করা যাবে ঠিকই, কিন্তু সেটা থেকে আসল কাজ পুরোপুরি উদ্ধার হবে না। আসল কাজ মানে ইমেজ সেন্সরে ফেলার সর্বোচ্চ পরিমাণ আলো কথা।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, লেন্স থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ আদায় করে নিতেই গোলাকার করে তৈরি করা হয়। ইমেজ সেন্সর বা ফিল্মের আকার চতুষ্কোণ হওয়ার কারণে আমরা পাই চারকোণা ছবি।

 

সূত্র:-ফিজিক্স স্ট্যাক এক্সেঞ্জ,উইকিপিডিয়া.

3 thoughts on “ক্যামেরায় কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *