স্বাস্থ্য ও পুষ্টি

জাপানিদের খাবার পুষ্টিকর ও তৃপ্তিদায়ক

জাপানিদের গড় আয়ু ৮৪ বছরের বেশি। জাপানে শিশুদের সামনে খাবার দেওয়া হয় ছোট ছোট প্লেটে।১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের প্লেটে ভাত এবং ২ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের বাটিতে শাকসবজি, ডাল বা তরকারি। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের কাজে আপনার শিশুকেও নিয়োজিত করুন, জাপানিরা এটা নিয়মিতই করেন। এ ছাড়া পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাবার খান।

জাপানিদের খাবার পুষ্টিকর ও তৃপ্তিদায়ক

জাপানি শিশুরা দুনিয়ার সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বা জাপানিদের গড় আয়ু ৮৪ বছরের বেশি। আবার দীর্ঘ জীবনে তাঁদের স্বাস্থ্য থাকে অটুট। শৈশব থেকেই তাঁরা আদতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলা হয়, এর পেছনের রহস্য কী?

খাদ্যতালিকায় তৃপ্তিদায়ক ও পুষ্টিকর খাবার:-

সাধারণত জাপানিদের খাবার পুষ্টিকর; তৃপ্তিদায়ক। তবে পুষ্টিকর খাবার পেটভরে খেলে পরে আর ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। তাই আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যবান করে তুলতে জাপানি সিউইড, সুশি বা তোফুই যে খাওয়াতে হবে তা নয় দেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই চলবে। উদ্ভিজ্জ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা ও উপকারী চর্বি [এ ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ] বেশি খাওয়াতে হবে। কম লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার রাখুন শিশুদের খাদ্যতালিকায়, এসব উদ্ভিজ্জ খাবার স্থূলতা এবং তা থেকে সৃষ্টি হওয়া রোগবালাইয়ের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করবে।

খাওয়া ও সংযম উপভোগ করতে শেখানো:-

শিশুকে অনুমতি দিন ট্রিট’ গ্রহণ করার, অনুমতি না দিয়ে কঠোর হয়ে তাকে অসামাজিক বানাবেন না। অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখরোচক খাবার উপভোগ করতে শেখান বা খাওয়ার সময় শিশুর মধ্যে সংযমবোধও যেন থাকে, সেদিকে তাকে নজর রাখতে বলুন। জাপানিরা পশ্চিমাদের তুলনায় স্ন্যাকস বা ভাজাপোড়া খুবই কম খায় ও তারা মেনে চলে কঠোর পরিমিতবোধ। তাছাড়াও সাংসারিক বা পেশাগত কাজে যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, দিনে অন্তত একবার আপনার শিশুর সঙ্গে একই টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এবং খাওয়ার সময় শিশুকে দেখান কীভাবে আপনি খাবারটি উপভোগ করছেন বা তা কতটা সুস্বাদু হয়েছে। এতে করে শিশু যেকোনো খাবার উপভোগ করে খাওয়া এবং সংযম বা পরিমিতবোধের চর্চাও শিখবে, জাপানিরা ঠিক এটাই করেন।

আরও পড়ুন: হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা

ভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নিতে শেখান:-

শিশুকে নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিতে শেখান। আপনার শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের বেলায় পছন্দ-অপছন্দের তালিকা বদলে যায় ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি করানো বাবা–মায়েদের; জন্য সহজ হয়। ছোট বেলা থেকেই ভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ নিতে পারলে আপনার শিশু পরবর্তী জীবনে নিজের ডায়েটের সময় সঠিক খাদ্যতালিকা ঠিক করতে পারবে।

ছোট ছোট প্লেটে খাবার পরিবেশন:-

১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের প্লেটে ভাত এবং ২ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের বাটিতে শাকসবজি, ডাল বা তরকারি পরিবেশন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। জাপানে শিশুদের সামনে খাবার দেওয়া হয় ছোট ছোট প্লেটে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটির ”সেন্টার ফর ওবেসিটি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনের গবেষক জেনিফার অরলেট ফিশারের গবেষণা বলছে, এতে শিশুদের খিদে বা গৃহীত খাবারের পরিমাণের মধ্যে ভালো সমন্বয় ঘটে। তাই আপনার শিশুর খাবারও তাই ছোট ছোট প্লেট বা বাটিতে পরিবেশন করুন। আবার পরিমিতিবোধ পালন করতে গিয়ে যেন প্রয়োজনীয় ফলমূল, শাকসবজি বাদ না পড়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে ভুলবেন না।

দৌড়ঝাঁপ করতে দেওয়া:-

শিশুদের ভিডিও গেম বা মুঠোফোনের আসক্তি থেকে দূরে রাখা খুবই দুরূহ কাজ। তারপরও দিনে অন্তত ১ ঘণ্টা বাইরে গিয়ে খেলাধুলা বা দৌড়ঝাঁপ করলে শিশুরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তাই আপনার শিশুকে ঘরের বাইরে, মাঠে খেলাধুলা করার জন্য উৎসাহ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম দরকার, এতে তাদের পেশি ও হাড় দৃঢ় ও মজবুত হয়।

খাবার তৈরি ও পরিবেশনে শিশুকে অংশগ্রহণ:-

অ্যাপেটাইট জার্নালে প্রকাশিত ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুদের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার তৈরির প্রক্রিয়ায় শিশুদের অংশ গ্রহণের সুযোগ দিলে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য ও ডায়েটের প্রতি বেশ মনোযোগী হয়ে উঠে। তাই খাবার তৈরি ও পরিবেশনের কাজে আপনার শিশুকেও নিয়োজিত করুন, জাপানিরা এটা নিয়মিতই করেন। এ ছাড়া পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাবার খান।

পেডিয়াট্রিকস জার্নালে ২০১৪ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, খাবার টেবিলে পরিবারের বড়দের উপস্থিতি শিশুদের বেশ উৎসাহিত করে। এতে শিশুরা শৈশবকালীন স্থূলতার ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পায় ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং শিশুরা হয়ে উঠে আত্মবিশ্বাসী, তা বলা বাহুল্য।

কিছু জায়গায় কর্তৃত্বপূর্ণ হওয়া:-

সন্তানের উপর কেউ কেউ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে গিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। যখন তাদের খাবার এবং জীবনযাপনের ব্যাপার চলে আসে, তখন কর্তৃত্বের চর্চা না করে উপায় নেই। জাপানিরা সন্তানের উপর কর্তৃত্ববাদী আচরণের চেয়ে কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে অভিভাবকত্বের; প্রয়োগ করতে বেশি পছন্দ করেন।

প্রশ্ন তাহলে, এই কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব আবার কী? সহজ কথায় বললে আমি বলেছি, তাই তোমাকে করতে হবে’ বা এ-জাতীয় বাক্য প্রয়োগ না করে শিশুদেরকে কিছু করতে বলা। কিন্তু কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব প্রয়োগে মা-বাবা হিসেবে আপনাকে আগে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন সরাসরি হ্যাঁ’ বা না’ বলেও কোনো কিছু শেখানো যায়। আবার শিশুরা কোন ভুল করলে শাস্তি না দিয়ে তার পাশে থাকা বা পরে বিষয়টি বোঝানো। এই নিয়ম শিশুদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করে, যা তাদের সুষ্ঠু খাদ্যাভ্যাসে অনুপ্রাণিত করে।

 

 

সূত্র:-রিডার্স ডাইজেস্ট.

3 thoughts on “জাপানিদের খাবার পুষ্টিকর ও তৃপ্তিদায়ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *