লাখ টাকা কেজি সবজি হপ শুটস
বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি হপ শুটস, তেমনই এর পুষ্টিগুণও। হপ ফুল দিয়ে তৈরি বিয়ার সহজে নষ্ট হয় না। হপ শুটসের ভেষজ গুণ যার মধ্যে রয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন, খনিজ, ভিটামিন- ই, ভিটামিন- বি৬ ও ভিটামিন- সি’ ও এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান- যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) সক্রিয় করে তোলে এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
লাখ টাকা কেজি সবজি হপ শুটস
একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হপস, থোকা থোকা ফুলবিশিষ্ট গাছের ডগা ‘হপ শুটস’ নামেও পরিচিত, যার দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। যেমন বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি হপ শুটস, তেমনই এর পুষ্টিগুণও।
খুব কম মানুষই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত হপ- হিউমুলাস লুপুলাস গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম। এটির বৈশিষ্ট্য জানার আগ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের অধিবাসীদের কাছে ‘হপ শুটস আগাছা হিসেবে পরিচিত ছিল হপ। এটি হপ শুটসের ফুলকে বলা হয় ‘হপ কোনস’। এই ‘হপ কোনস বিয়ার প্রস্তুত করতে কাজে লাগে ও আর বাকি অংশ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হপ ফুল দিয়ে তৈরি বিয়ার সহজে নষ্ট হয় না।
এই ফুল কোনো কোনো পানীয়তে সুগন্ধী দেওয়ার কাজেও লাগে। মূলত পানীয় তৈরিতেই প্রথম এই ‘হপ শুটস’ ব্যবহার সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে এর ঔষধি গুণ সামনে আসতে শুরু করে। হপ শুটসের’ পুষ্টিগুণও যেমন, তেমনই বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজিও বটে।
আরও পড়ুন: বিরল আলুর লা বোনোতে
হপ শুটসের ভেষজ গুণ যার মধ্যে রয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন, খনিজ, ভিটামিন- ই, ভিটামিন- বি৬ ও ভিটামিন- সি’ ও এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান- যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) সক্রিয় করে তোলে এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল গুণ টিবি রোগীদের ওষুধ তৈরিতে, ক্যানসারের চিকিৎসায় কাজে লাগে। ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে নষ্ট করে দেয় হপ শুটসের মধ্যে থাকা অ্যাসিড। শরীরের মেটাবলিজমকে (বিপাক) ত্বরান্বিতও করে হপ শুটস আবার খাবারকে দ্রম্নত হজম হতেও সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পেশি ও শরীরের ব্যথা কমাতে হপস ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক তেল বা খনিজগুলোর ত্বকের ওপর একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব রয়েছে এবং সারফেস ব্লাড ভেসেল কমাতে ব্যবহৃত হয় এবং এর ফলে ত্বকে লালচেভাব ও জ্বালাপোড়া কমাতেও সাহায্য। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চুল ধুতে বিয়ার ব্যবহৃত হয়, এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং হপস যা চুল পড়া হ্রাস করে ও খুশকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, হপস সবজিতে প্রচুর এসেনশিয়াল অয়েল থাকায় এটি সুখকর নিদ্রায় সাহায্য করে। হপ ব্যথা প্রশমনের মতো উপাদান এবং এর সিডাটিভ ইফেক্ট (উপশমকারী) নারীদের ঋতুস্রাবের ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে ও এর সিডাটিভ গুণের; কারণে শরীরের পেশিগুলোকে আলগা করে এবং ব্যথা কমায়।
আরও পড়ুন: নায়াগ্রায় জলপ্রপাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
এই গাছটির অবশ্য আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে বিশ্বে বাসীর কাছে । বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজির গাছ এটি এক কেজির দাম লাখ টাকার কাছাকাছি, চাহিদা না থাকায় বাংলাদেশ-ভারতে এই সবজির চাষ হয় না। হপ শুটস মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকায় বহুল চাষ বা উৎপাদন হয়ে থাকে। হপ শুটস সবজিটি দেখতে অনেকটা অ্যাসপারাগাসের মতো, অ্যাসপারাগাস যেভাবে রান্না করে খেতে হয় এই সবজিটিও সেভাবেই খেতে পারবেন খেতেও অনেকটা সে রকমই। এ ছাড়া হপ শুটসের আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে এর। ৭৩৬ সালে জার্মানিতে হপ শুটস সবজিটি প্রথম চাষ শুরু হয়। তবে ১০৭৯ সালে প্রথম হপ শুটস পানীয়তে ব্যবহার করা হয় এবং হপ শুটস-এর আরও অনেক ঔষধি গুণের কথা সামনে আসতে থাকে।
হপ শুটস সবজিটির গাছটি মূলত ঝোপ প্রকৃতির এর ফুলগুলো সবুজ রঙের আর খুব নরম হয় তোলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর বিক্রির যোগ্য থাকে না। তাই সেগুলো খুব সাবধানে গাছ থেকে তুলতে হয়।
সাধারণত হপ শুটস শীতপ্রধান অঞ্চলে জন্মায় এবং সর্বোত্তম বৃদ্ধির জন্য অন্তত ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ হিমায়িত তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। তবে অবাক হবেন যে, মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রায়ও হপ গাছ বেঁচে থাকতে পারে। এই সমস্ত কারণেই হপ শুটসের এমন আকাশছোঁয়া দাম।