শিশুকে রোগবালাইয়ের কে দূরে রাখা
শিশুর জন্য সব সময় সব ধরনের খাবারের সুষম সমন্বয় রাখতে হবে। যতটা সম্ভব শিশুদের তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
লেবু, কমলা, মাল্টা, বরই, আলু, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ভিটামিন সি-তে ভরপুর খাবার খেতে শিশুদের উৎসাহিত করুন। যেকোন কাটাছেঁড়া দ্রুত সারাতে ভূমিকা রাখে পাশাপাশি কোষের ক্ষয়রোধ করতেও ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। পড়াশুনায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শিশুকে রোগবালাইয়ের কে দূরে রাখা
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তুলনায় একটি শিশুর রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। কারণ জন্ম নেয়ার পর থেকে একটি শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিবেশের বিভিন্ন জীবাণুর সাথে পরিচিত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এটি এসব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে। তাই ছোটদের অনেক সময়ই রোগবালাই লেগেই থাকে, শত রকমের সাবধানতা মেনে চললেও শিশুকে রোগবালাইয়ের হাত থেকে সবসময় দূরে রাখা সম্ভব হয় না।
তাই এসব রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়াতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি হবে, শিশু তত সহজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগবাহী জীবাণু শুরুতেই ধ্বংস করে দেবে।
তাই শিশুকে জীবাণু থেকে দূরে রাখা বা তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা জরুরি। তাই অভিভাবকেরা তার জন্য কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই সফল হতে পারেন।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:- মাতৃদুগ্ধ হলো শিশুর জীবনে প্রথম খাদ্য, কোন ফর্মুলা বা বাজারজাত করা দুধের চেয়ে এটি হাজার গুণ বেশি কার্যকর। মাতৃদুগ্ধ থাকে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধী এন্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকা। শিশুর বিভিন্ন রোগ থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়সের নানা রোগের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধ গড়তে শুরু করে। তাই শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস মায়েরর দুধ যথাযথ নিয়মে খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন: কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার
তবে শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে ৭ মাসের শুরু থেকে সে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রকমের খাবার গ্রহণ করতে শুরু করে ও বিভিন্ন পারিবারিক খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। শুরু থেকেই তাকে এমন খাবারের সাথে অভ্যস্ত করতে হবে, যা তার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয় ও তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে।
সবজি ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল:- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর, যেকোন কাটাছেঁড়া দ্রুত সারাতে ভূমিকা রাখে পাশাপাশি কোষের ক্ষয়রোধ করতেও ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। লেবু, কমলা, মাল্টা, বরই, আলু, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ভিটামিন সি-তে ভরপুর খাবার খেতে শিশুদের উৎসাহিত করুন। ভিটামিন এ শরীরের ইনফেকশন সারাতে ভূমিকা রাখে পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এটি ভূমিকা রাখে। ডিম, গাজর, পালং শাক, মাংস, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে শিশুদের উৎসাহিত করুন।
দুধ:- হাড় মজবুত করার জন্যেই, ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও দুধের ভূমিকা অনেক। দুধের ভিটামিন ডি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
দই:- দই হলো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ একটি খাবার। পেটের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর দই আবার সর্দি-কাশির বিরুদ্ধেও এটি বেশ উপকারী। দইয়ে থাকে শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া, ভিটামিন ডি ও আছে অনেক।
ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার:- ব্রকলি, পালং শাক, বাদাম ইত্যাদি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে শিশুদের উৎসাহিত করুন। ভিটামিন ই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে পাশাপাশি কোষের ক্ষয়রোধ করতেও ভূমিকা রাখে।
মাংস:- মাংসে থাকে জিংক তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস থেকে শিশুদের দূরে রাখাই ভালো। জিংক রক্তের শ্বেত রক্তকণিকাদের বেশি শক্তিশালী করে তোলে। আর এই শ্বেতরক্তকণিকা দেহের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার:- এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের তেল ও বাদামে আবার ইলিশ মাছে অনেক ওমেগা-৩ থাকে। ওমেগা-৩ শ্বেতকণিকার কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে দেহে ইনফেকশনের হার কমে। ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার শিশুর বুদ্ধি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে বেশ। ছোট শিশুরা মাছ কম খেলে তিসি বা তিলের তেল দিয়ে রান্না করা খাবার দেয়া যেতে পারে। তিসি বা তিলের তেলেও অনেক ওমেগা-৩ উপাদান থাকে।
আরও পড়ুন: ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
মাশরুম:- মাশরুমে থাকে ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে ভূমিকা রাখে পাশাপাশি এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খেতেও বেশ সুস্বাদু। শিশুরা বেশ আগ্রহ নিয়েই এটি খেয়ে থাকে নাস্তা কিংবা মূল খাবারের সাথে।
খেয়াল রাখতে হবে:-
* যতোই উপকারী হোক অতিরিক্ত খাওয়াবেন না কোন খাবারই।
* আবার খাবারের উপরেই রোগ বা সুস্থ থাকা নির্ভর করে না। অন্যান্য কারণেও রোগ হতে পারে।
* শিশুর জন্য সব সময় সব ধরনের খাবারের সুষম সমন্বয় রাখতে হবে।
* যতটা সম্ভব শিশুদের তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ঘুম:- গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে দেহের সুরক্ষাকারী কোষ বা কোষের নির্যাস, যেগুলো বিভিন্ন জীবাণু ও রোগ ধ্বংস করে, সেগুলোর পরিমাণ কমে যায়, ফলে দেহ তার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে তাই শিশুদের যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। তাতে দেহ স্বাভাবিক নিয়মেই অনেক রোগ থেকে নিজেদের প্রতিরোধ করতে পারবে।
ছোট শিশুর বয়স তার ঘুমের প্রয়োজন:-
* ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর ১০-১৩ ঘণ্টা।
* ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুর ৯-১১ ঘণ্টা।
* ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
ব্যায়াম:-নিয়মিত খেলাধুলা, শারীরিক কসরত বা পরিমিত ব্যায়াম শিশুর রোগ প্ররোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও শিশুকে হাসিখুশি রাখে। তার পড়াশুনায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।