তথ্য ও প্রযুক্তি

ইসিম নাকি ফিজিক্যাল সিম কোনটা ভালো

অ্যাপলের আইফোন ১৪ মডেলগুলো চলছে শুধু ই-সিমের মাধ্যমে।

খালি জায়গায় অতিরিক্ত চিপ, সেন্সর বা বড় ব্যাটারি সংযোজন করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই স্থানীয় ক্যারিয়ারগুলোর সেবা নিতে পারবে।

যদি আপনার ডিভাইস চুরি হয়ে অপরাধীদের আপনার সিম থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে।

ইসিম নাকি ফিজিক্যাল সিম কোনটা ভালো

বর্তমান বিশ্বে বাড়ছে ই-সিমের চাহিদা বিপরীতে কমছে প্রচলিত সিম কার্ডের প্রয়োজনীয়তা। তাই স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকছে ই-সিম ফোনের উৎপাদনে। যদিও অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতারা পুরোপুরি এগোনোর ক্ষেত্রে এখনো সতর্কতা অবলম্বন করছে। প্রশ্ন হচ্ছে- ই-সিমে গ্রাহকের লাভ কী? একজন ব্যবহারকারী কী সুবিধা পাবেন ই-সিম স্মার্টফোন ব্যবহার করে? অথবা ই-সিমের কী সুবিধা? চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের আলোচনায়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া অ্যাপলের আইফোন ১৪ মডেলগুলো চলছে শুধু ই-সিমের মাধ্যমে।

এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল বা ই-সিমের, যা টেলিফোন পরিষেবা ব্যবহার করে গ্রাহকদের শনাক্ত করার তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি প্রচলিত সিমের মতোই আবার এর কাজও প্রায় একই রকমের। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, ই-সিম আপনার স্মার্টফোনের মাদার বোর্ডে একটি চিপের মতো এমবেড বা সংযুক্ত করা থাকে। সে জায়গায় ই-সিম আপনার স্মার্টফোনেরই একটি অংশ। যা স্থায়ীভাবে স্মার্টফোনের মাদার বোর্ডে বসানো থাকে। আপনি চাইলেই স্মার্টফোন থেকে এটি অপসারণ করতে পারবেন না। প্রচলিত সিমগুলো আপনি চাইলে খুলতে বা অপসারণ কিংবা অদল-বদল করতে পারেন।

আরও পড়ুন: মহাকাশে সাধারণ কলম দিয়ে লেখা যায় না কেন?

এই নয় যে, ই-সিম পরিবর্তন করা যাবে না চাইলে ই-সিমের নম্বর বা সিম কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারবেন। ই-সিম পরিবর্তনের জন্য শুধু আপনার ক্যারিয়ার অথবা সিম কোম্পানির সঙ্গে একটি ফোন কল বা একটি কিউআর কোড স্ক্যান কিংবা সেটিংসের পরিবর্তনই যথেষ্ট।

ই-সিম ব্যবহারের সুবিধা:- ই-সিম স্মার্টফোনের নির্মাতাদের মাধ্যমে এমবেড বা স্থাপন করা থাকে। আবার এর তথ্য সহজেই পুনর্লিখন করা যায়। ই-সিমযুক্ত ডিভাইসগুলোর অন্যতম আকর্ষণ হলো সহজে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সুবিধা। যদিও কয়েকটি সহজ পদক্ষেপেই এসব তথ্য পুনর্লিখনের মাধ্যমে অন্য কোনো ক্যারিয়ার বা সিম কোম্পানিতে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। ফিজিক্যাল সিম বা প্রচলিত সিম পরিবর্তনের তুলনায় এতে আপনার সময় কম লাগবে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই স্থানীয় ক্যারিয়ারগুলোর সেবা নিতে পারবে।

একাধিক ই-সিম:- আটটি পর্যন্ত ই-সিম আইফোন ১৪-এর মতো ই-সিম ডিভাইস ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে শুধু দুটি সিম সক্রিয় থাকে। অপরদিকে যত খুশি মোবাইল নম্বর ব্যবহার এবং সঞ্চয় করতে পারবেন। আপনাকে নম্বরগুলোকে একেকটি প্রোফাইল হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। আপনার ইচ্ছানুযায়ী সেগুলোর মধ্যে পরিবর্তন করতে পারবেন।

ধুলো ও পানিরোধী:- পানিরোধী ডিভাইস হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ই-সিম। ই-সিম সে জায়গায় আপনার স্মার্টফোনে আরেকটি ছিদ্র কমাতে সাহায্য করবে। তাতে আপনার ফোনকে ধুলো এবং আর্দ্রতা থেকে উত্তম সুরক্ষা প্রদান করবে।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন ফুটস্টেপ বা পদক্ষেপ মাপে কীভাবে

কম জায়গা দখল:- একটি স্মার্টফোনের প্রতি ইঞ্চি জায়গা পার্থক্য তৈরি করতে পারে। এই অতিরিক্ত এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা বড়, ভালো কর্মক্ষমতার ব্যাটারিকে জায়গা করে দিতে পারে। একটি ছোট জায়গার তারতম্যই তৈরি করে দিতে পারে ২ টি ফোনের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। খুবই ছোট চিপ ই-সিমগুলোতে। তাই প্রচলিত সিমের তুলনায় অনেক কম জায়গা নেবে। ফলে বাড়তি খালি জায়গায় অতিরিক্ত চিপ, সেন্সর বা বড় ব্যাটারি সংযোজন করা সম্ভব।

হারানো ডিভাইস ট্র্যাকিং:- ই-সিমগুলো যেহেতু প্রচলিত সিমের মতো নয়। আপনি চাইলে সরাসরি অদল-বদল বা খুলতে পারবেন না। যদি আপনার ডিভাইস চুরি হয়ে অপরাধীদের আপনার সিম থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে। চুরি বা হারানো স্মার্টফোনকে ট্র্যাক করাও সহজ করে তুলতে পারে। এটি যদিও আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে এর অনুকূল এবং প্রতিকূল দুই ধরনের দিকই রয়েছে। আবার নিঃসন্দেহে এটি স্মার্টফোনের সুরক্ষার একটি অতিরিক্ত স্তর যুক্ত করে।

ই-সিম সাপোর্টেড স্মার্টফোন:- ই-সিম সাপোর্টেড দিক দিয়ে অ্যাপল সবচেয়ে এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের আইফোন ১৪ সব স্মার্টফোন সম্পূর্ণরূপে ই-সিমের ওপর নির্ভরশীল। অন্যান্য দেশের জন্য তৈরি মডেলগুলোতে ফিজিক্যাল সিম কার্ডের পাশাপাশি ই-সিম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। ছোট আইফোন এসই-সহ আইফোন ১১, এক্সএস, এক্সআর, ১২বা ১৩ সিরিজের ডিভাইসগুলোর সবগুলোই ই-সিম সাপোর্ট করে। অ্যান্ড্রয়েডের দিক দিয়ে পিক্সেল ২ থেকে পিক্সেল ৭ প্রো পর্যন্ত ই-সিম সাপোর্ট করে। সকল স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০, এস২১, এবং এস২২ সিরিজের স্মার্টফোন ই-সিম সাপোর্ট করে। তাছাড়াও স্যামসাং ফ্লিপ অ্যান্ড ফোল্ড সিরিজ ও নোট ২০ সিরিজ ই-সিম সাপোর্ট করে। অপো ফাইন্ড এক্স৩, এক্স৩ প্রো, এক্স৫; এবং এক্স৫ প্রো সবই ই-সিম সাপোর্ট করে থাকে। এ ছাড়া সনির এক্সপেরিয়া ১ আইভি; সনি এক্সপেরিয়া ৫ আইভি; সনি এক্সপেরিয়া ১০ থ্রি লাইট এবং সনি এক্সপেরিয়া ১০ আইভি ই-সিম সাপোর্ট করে।

One thought on “ইসিম নাকি ফিজিক্যাল সিম কোনটা ভালো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *