প্লেনে মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা জরুরি কেন
কথায় আছে সাবধানের মার নেই, সেজন্যই এত সাবধানতা। মোবাইল বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সিগন্যাল আসলেই কি বিমানকে বিপদে ফেলে দিতে পারে? ইউরোপিয়ান অ্যাভিয়েশন সেফটি অ্যাজেন্সি মতে, বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিমানের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায় না।
প্লেনে মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা জরুরি কেন
বিমানে না চড়লেও বিভিন্ন মুভি বা টিভি সিরিজে আমরা নিয়মিতই দেখি বিষয়টা। আর আমাদের মধ্যে যাঁরা বিমানে চড়েছেন, তাঁদের তো সরাসরিই অভিজ্ঞতা আছে, বিমান ছাড়ার কিছু সময় আগে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বা বিমানের কর্মীরা ঘোষণা করে জানিয়ে দেন, সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার আমাদের স্মার্টফোনগুলোতে তো এজন্য আলাদা একটা মোড-ই আছে এয়ারপ্লেন মোড (অনেকে বলেন, অ্যারোপ্লেন মোড) বা অনেক ফোনে লেখা থাকে ফ্লাইট মোড তবে জিনিস একই।
বিমানের কর্মীরাই বলে দেন, সেলুলার ডিভাইস, অর্থাৎ মোবাইল, ট্যাব বা কিন্ডলের সিগন্যাল বিমানের নেভিগেশনাল ইকুইপমেন্ট [দিকনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র] বা অন্যান্য যন্ত্রের সিগন্যালে বাধা দিতে পারে। তবে আসলেই কি সেটা সম্ভব? মোবাইল বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সিগন্যাল আসলেই কি বিমানকে বিপদে ফেলে দিতে পারে?
এরকম দুই টি ঘটনার কথা শোনা যায় ২০০০ সালে সুইজারল্যান্ডে একটা উড়োজাহাজ ক্র্যাশ করে। এবং নিউজিল্যান্ডে ২০০৩ সালে একইরকম একটি ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক যন্ত্র থেকে আসা সিগন্যালকে এ দুটো বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়, অবশ্য নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেন এ রকম দাবি? এরকম ঘটনা বোঝার জন্য আগে জানা প্রয়োজন, উড়োজাহাজ বা আমাদের বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো কীভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: মৌমাছি সম্পর্কে অজানা তথ্য
আপনার হাতের মোবাইলটি মোবাইল থেকে কোনো ওয়্যারলেস বা সেলুলার (ফোন) নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করে। এই যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় বেতার তরঙ্গ। মোবাইল থেকে যে তরঙ্গ পাঠানো হয়, নেটওয়ার্ক টাওয়ার তা রিসিভার বা গ্রাহক যন্ত্র সেটা ধরতে পারে। আবার এই টাওয়ার ছাড়াও কাছাকাছি যদি অন্য কোনো গ্রাহক যন্ত্র থাকে, তবে সেগুলোও এই সিগন্যাল ধরতে পারবে। তাই উড়োজাহাজের দিকনির্ণায়ক যন্ত্রগুলোও বেতার সিগন্যাল ধরতে পারে, ধরতে পারে উড়োজাহাজের অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রও। যার ফলে বিভ্রান্ত হতে পারে সেই যন্ত্রগুলো, অথবা তার কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। উড়োজাহাজের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বা সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ব্যবহৃত সেন্সর এবং এসব যন্ত্রের কাজে বাধা পড়লে সমস্যা হওয়া তাই স্বাভাবিক। কেননা ফোন বন্ধ থাকলে বা ফ্লাইট মোডে থাকলে এ ধরনের সিগন্যাল আদান-প্রদান করে না ও এ সময় কাউকে কলও করা যায় না। এ ফলে উড়োজাহাজের সমস্যা হয় না আর।
এসবই হলো তত্ত্বকথা, বাস্তবে উড়োজাহাজের সংবেদনশীল সেন্সর বা গ্রাহকযন্ত্রগুলো যেন অন্য কোন সেলুলার সিগন্যালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই তৈরি কার হয়। কিন্তু বেতার তরঙ্গের কম্পাংক অনেক বিস্তৃত ও এক কম্পাঙ্কের সঙ্গে অন্য কম্পাঙ্কের তরঙ্গ সাধারণত মিথস্ক্রিয়া করে না। তবুও আশঙ্কা কিছুটা থেকেই যায়। তাই নির্দিষ্ট কম্পাঙ্করোধী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনে।
মোবাইল ফোনগুলো নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাধারণত ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাহার্জ এবং ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে। আবার উড়োজাহাজে সাধারণত ব্যবহার করা হয় ১১৮ থেকে ১৩৭ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ। এজন্যই বিমানের সেন্সরগুলো যেন মোবাইলের কম্পাঙ্ক ধরতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরোধক ব্যবস্থাও থাকে। কথায় আছে সাবধানের মার নেই, সেজন্যই এত সাবধানতা।
আরও পড়ুন: আয়োডিন যুক্ত লবণ চেনার উপায়
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বন্ধ রাখতে হয় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি?
এর একটা কারণ, আশঙ্কা তো থেকেই যায় বিপদের, সেটা এড়াতে ও আরেকটা কারণ, বিমানচালকদের বিরক্তি ও সমস্যা যেন না হয়, সেজন্য। যদি আপনি কখনো রেডিও বা স্টেরিও স্পিকার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে হয়তো দেখেছেন, ফোনে কল বা মেসেজ আসলে ভন ভন করে শব্দ হতে থাকে রেডিও বা স্পিকারে। যদিও সম্ভবনা কম, হয়তো বিমানচালকের হেডফোনেও এরকম শব্দ হতে পারে আপনার মোবাইলে কোনো কল বা মেসেজ আসলে। সেটা বিমানচালকদের বিরক্তি বা মনযোগ নষ্ট করে দিতে পারে। এবং সে মুহূর্তে নেওয়া চালকের কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য হয়তো ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
এসব কারণেই বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ রাখারই পক্ষে ২০১৪ সালে এ কথা ঘোষণা দিয়েই জানিয়ে দিয়েছে, চিনের সিভিল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। কিন্তু ইউরোপিয়ান অ্যাভিয়েশন সেফটি অ্যাজেন্সি মতে, বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিমানের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায় না।
সূত্র:-সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ব্রিটানিকা.
Good
Pingback: বিরল আলুর লা বোনোতে - amaderkhabar
Pingback: এআই গ্রাফিক্স এনভিডিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী চিপ - amaderkhabar