অনুপ্রবেশকারীদের দিকে কুকুর কেন ঘেউ ঘেউ করে
ধুরো কুকুরটা খামোখা চিল্লায়। কুকুরে শ্রবণ সীমা ১৫০০০ হার্জ থেকে ২৫০০০ হার্জ পর্যন্ত। তবে কুকুর ২০ হার্জের কম, কিন্তু কুকুর আবার ১৫ হার্জের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। কোনো চোর নয়তো শিয়াল বা বনবিড়াল চুপিচুপি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল।
অনুপ্রবেশকারীদের দিকে কুকুর কেন ঘেউ ঘেউ করে
গভীর রাতে ঘুমে অচেতন, হঠাৎ কুকুরের গগনবিদারী চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল গৃহস্থ বাড়ির লোকজন। ভাবলেন, কোনো চোর নয়তো শিয়াল বা বনবিড়াল চুপিচুপি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল।
গৃহস্থ লাইট জ্বেলে বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে এলেন, কোথাও কেউ নেই।
কিছুই নেই তিনি নিশ্চিন্ত ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘণ্টাখানেক পরই আবার কুকুরে চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ধুরো কুকুরটা খামোখা চিল্লায়।
এবার বিছানা ছেড়ে উঠলেন না।
সকাল উঠে দেখা গেল, তার হালের গরুটা চোরে নিয়ে গেছে বা বড় মোরগগুলো হাতিয়ে নিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে গ্রামে গ্রামে। প্রশ্ন হচ্ছে চোর বা শিয়ালের অস্তিত্ব কুকুরে টের পেল, কিন্তু গৃহস্থ টের পায়নি কেন? এ প্রশ্নের উত্তরটা তো সাধারণ হতে পারে গৃহস্থ ঘুমিয়ে ছিলেন, পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে যদি বলি কুকুরও তো ঘুমিয়েছিল।
জবাব আসতে পারে গৃহস্থ ঘুমায় ঘরের ভেতরে আর কুকুর বাইরে, অতএব কুকুর টের পাবে সেটাই স্বাভাবিক। আসলে ব্যাপারটা এতো সহজ নয়।
কোনো গৃহস্থ বাড়িতে শিয়াল বা চোর যখন ঢোকে তখন তারা এমনভাবে পা ফেলে যেন এতটুকুও শব্দ না হয়। আর সে শব্দের ২০ হার্জের কম।
সেটা ইনফ্রাসনিক শব্দ; অন্যদিকে কুকুরে শ্রবণ সীমা ১৫০০০ হার্জ থেকে ২৫০০০ হার্জ পর্যন্ত। তবে কুকুর ২০ হার্জের কম, কিন্তু কুকুর আবার ১৫ হার্জের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। তাই চোরের বা শেয়ালের আগমনের খবর মানুষের আগে কুকুরে টের পাবে সেটাই স্বাভাবিক।
পাশাপাশি কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর, প্রত্যেকটা মানুষের গায়ের গন্ধ আলাদা করে মনে রাখতে পারে কুকুর। এতএব গভীর রাতে অপরিচিত লোক বাড়িতে ঢুকলে কুকুর টের পাবেই। আবার শিয়ালের গায়ের গন্ধ কুকুর বহুদূর থেকেই টের পায়।
এ গন্ধের ব্যাখ্যাটাও ঠিক, সেটা শুধু কুকুর জেগে থাকলেই সম্ভব। ঘুমন্ত কুকুর শুধুমাত্র গন্ধের কারণেই চোর বা শিয়ালের অস্তিত্ব টের পেয়ে যাবে এ ব্যাপার অবিশ্বাস্য। আসল ব্যাপার টা শব্দ তরঙ্গের কম্পনই।
কীটপতঙ্গের সংখ্যাটাই বেশি, পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে তার মধ্যে। দিনের বেলায় মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনের কোলাহলের শব্দে কীটপতঙ্গের ডাক চাপা পড়ে যায়। তবে রাত হলেই ভেসে আসে হাজারো কীটপতঙ্গের শব্দ। কিন্তু সব কীটপতঙ্গের ডাক আমরা কি শুনতে পাই? অবশ্যই না।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোন ফুটস্টেপ বা পদক্ষেপ মাপে কীভাবে
পৃথিবীর কীটপতঙ্গের শতকরা দশভাগের ডাকও আমাদের কানে পৌঁছায় না। কারণ কীটপতঙ্গ পরস্পরের সাথে ভাব করে ইনফ্রাসনিক; অথবা আল্ট্রাসনিক কম্পাঙ্কের শব্দের সাহায্যে।
ইনফ্রাসনিক, অবাক হতে পারে অনেকে, মানুষের সর্বোচ্চ শ্রবণ সীমার চেয়েও বেশি জোরে শব্দ বা কম্পাঙ্ক করতে পারে কীটপতঙ্গ। হে আগেই জানা গেছে, কম্পাঙ্ক দিয়ে শব্দের তীব্রতা বোঝায় না, কম্পনের পরিমাপ বোঝায়। তাই ইনফ্রাসনিক শব্দ মানেই জোরালো আওয়াজ হতে হবে তা কিন্তু নয়।
সূত্র:-হাউ ইট ওয়ার্কস.
Pingback: হাসনাহেনা ফুলের গন্ধে কি সাপ আসে - amaderkhabar
Pingback: মশা মানুষের পায়ের পাতায় বেশি কামড়ায় কেন - amaderkhabar