জাপানের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল
পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর তালিকাতে একদম উপরের সারিতে রয়েছে জাপান। টেকটনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে এসব আগ্নোগিরি লাভা উদগীরণ করতে শুরু করে এবং ভূমিকমম্পের মাত্রা ও স্থায়ীত্ব ততো বাড়ে। জাপান এই রেখায় অবস্থিত বলে, এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতাও বেশি।
জাপানের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল
ভূমিকম্পে ২০২৪ সালের প্রথম দিনেই কেঁপে উঠেছে জাপান। ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এ ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ।
ভূমিকম্প নতুন ঘটনা নয় জাপানে জন্য, পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর তালিকাতে একদম উপরের সারিতে রয়েছে জাপান। যার কারণ তাঁদের ভৌগলিক অবস্থান। তবে ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই জাপানে কেন এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়?
তাহলে আগে জানতে ভূমিকম্পের কারণ কী।
পৃথিবীর ভূকাঠামো মোটামুটি তিন রকম।
একদম উপরে ভূত্বক এটা লবণ, মাটি, শিলাপাথর দিয়ে তৈরি প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পুরু কঠিন ভূত্বক। আবার এর ঠিক নিচে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার পুরু এক ধরনের ঘন ও আঠালো অংশ স্তর। সবার শেষে ৩ হাজার কিলোমিটার ব্যাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চল, তাই দ্বিতীয় স্তরের ঘন ও আঠালো স্তরের উপর ভাসছে ভূত্বক।
ভূত্বক বেশ কয়েকটি ছোটবড় খন্ড খন্ড প্লেটে বিভক্ত যাকে বলে টেকটনিক প্লেট। এই সব প্লেটগুলোর মধ্যে রয়েছে ৭ টি বড় মহাদেশীয় প্লেট যেমন: প্রশান্ত মহাসাগরীয়, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, আটলান্টিক, উত্তর আমেরিকান, দক্ষিণ আমেরিকান এবং ইন্দো-অষ্ট্রেলীয় প্লেট। তাছাড়াও ভারতীয় প্লেটের মতো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট প্লেটও আছে, এসব প্লেট কিন্তু একেবারে স্থির নয়।
আরও পড়ুন: নারকেল তেল শীতকালে জমে কেন
প্লেটগুলো দ্বিতীয় স্তরের ঘন আঠালো স্তরের উপর ভাসছে এবং আঠলো তরলের চলাচলের কারণে খুব ধীরে হলেও প্লেটগুলোও চলতে থাকে। চলার পথে কখনো কখনো একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কাও লাগে। যেমন একসময় আফ্রিকার কাছাকাছিই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশীয় প্লেট। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা এশিয়ার দিকে সরে আসে, এবং একসময় এশীয় প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এর সঙ্গে যুক্ত হয়।
এই ছোটখাটো ধাক্কার কারণে ভূমিকম্প হয়। তাছাড়াও ভূপৃষ্ঠের নিচে জমা হওয়া শক্তিও পৃথিবীকে আঘাত করে। এই শক্তিগুলো আসলে কী বা আসে কোথা থেকে? ধরা যাক, একটা জায়গায় বহুদিন গ্যাস জমা হয়েছে, এই গ্যাসের চাপ একসময় এত বেশি হয় যে পৃথিবীর উপরের স্তরের শিলাগুলোকে ধাক্কা দেয় এবং সেই ধাক্কায় কেঁপে উঠে পৃথিবী।
আবার এই ধাক্কা দেওয়ার যে ব্যাপারটা ঘটছে শুধু গ্যাসীয় বস্তুর ক্ষেত্রে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এমনও হতে পারে ভূপৃষ্ঠের নিচে কোথাও গলিত লাভা জমা হয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে, তখন সেখানকার পদার্থগুলোর ঘনত্ব কমতে থাকবে, তাতে অণুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে চাইবে। দূরে সরে যাওয়ার কারণে বাড়তি জায়গা তো দরকার। যে জায়গায় পদার্থগুলো আটকে ছিল, সে জায়গা তো বড় হচ্ছে না। তখনই অণুগুলোর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করবে ও যে জায়গায় গলিত লাভা আটকে ছিল সেখাকার প্লেটগুলো বাড়তি চাপ অনুভব করবে। যখন খুব বেশি চাপ হবে তৈরি হবে তখন ভূপৃষ্ঠ কেঁপে উঠবে।
কিন্তু সব সময় লাভাগুলো বেরিয়ে আসতে পারে না বা চাপ এত বেশি হয়, প্রচণ্ড শক্তিতে ভূপৃষ্ঠকে ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কার কারণে ভূপৃষ্ঠে কম্পন উঠে। আবার যদি ভূপৃষ্ঠের কোথাও ফাটল বা দুর্বল কোনো জায়গা থাকে, সেখান থেকে প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে আসে লাভা; আমরা যাকে অগ্ন্যুৎপাত বলি। এবং যে ফাটল থেকে লাভা বেরিয়ে আসে, সেটাকে অগ্নেয়গিরি বলা হয়। অগ্ন্যুৎপাত বা অগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরিয়ে আসার সময় ভূপৃষ্ঠকে প্রবলভাবে ধাক্কা মারে, ফলে কেঁপে কেঁপে উঠে পৃথিবী।
এছাড়া টেকটনিক প্লেটগুলো কাছাকাছি এসে একে-অন্যের কিছুটা উপরেও চলে আসতে পারে। তাই বলে সারা জীবন টেকটনিক প্লেটগুলো একটা আরেকটা উপরে চড়ে বসে থাকবে, তা কিন্তু না, প্রাকৃতিক কারণেই তাকে সরে আসতে হবে। টেকটনিক প্লেটগুলো এই সরে আসার চেষ্টা যখন চলে, তখনই ভূমিকম্প হয়।
আরও পড়ুন: গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী
জাপানের ভূমিকম্পের কারণ টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া যেমন আছে, আছে অগ্নুৎপাতের লাভা উদগীরণও। ভৌগলিকভাবে ‘প্যাসিফিক রি অব ফায়ার’ অঞ্চলে জাপান অবস্থিত। আবার এই রিং অব ফায়ার হলো প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে ঘোড়ার নালের মতো দেখতে একটি টেকটনিক ফাটল রেখা। কিন্তু এই রেখায় প্রশান্ত মহাসাগীয়র টেকটনিক প্লেটের সঙ্গে ইউরেশীয়, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, উত্তর আমেরিকান ও দক্ষিণ আমেরিকান টেকটনিক প্লেটগুলো স্পর্শ করে আছে। তাই প্লেটগুলোর যেকোনো একটি প্লেট নড়ে উঠলেই এই রেখার ভূমিকম্প হতে পারে।
আবার প্রচুর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে এই রেখা বরাবরে। এই টেকটনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে এসব আগ্নোগিরি লাভা উদগীরণ করতে শুরু করে এবং ভূমিকমম্পের মাত্রা ও স্থায়ীত্ব ততো বাড়ে। জাপান এই রেখায় অবস্থিত বলে, এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতাও বেশি।
সূত্র:-লাইভসায়েন্স,ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক.
Right Information
😭😭😭😭😭
Thank U
Pingback: মৌমাছি সম্পর্কে অজানা তথ্য - amaderkhabar