তথ্য ও প্রযুক্তি

পৃথিবী সৌরজগত সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ

শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বেশি এবং এটি কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা গঠিত, তাপমাত্রা ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে।  অনেক গ্রহ আছে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, যেগুলোর অবস্থান সূর্য থেকে খুব একটা দূরে নয় আবার কাছেও নয়। যতদিন আমরা পৃথিবীর বাইরে অন্য আরেকটি গ্রহে বসবাসযোগ্য; জায়গা না পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত এখানকার মতো জায়গা আর নেই।

পৃথিবী সৌরজগত সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ

প্রায়ই আমরা আবহাওয়া নিয়ে অভিযোগ করি, বিশেষ করে এই পৃথিবীতে যখন আবহাওয়ার চরম বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদি আমাদের ছুটির দিন ঘণ্টায় ৮০০০ কিলোমিটার বাতাস কিংবা সীসা গলে যাবার মতো প্রচণ্ড তাপের মধ্যে কাটাতে হয়, তখন কেমন হবে? আবহাওয়া ভালো হোক বা খারাপ যা হোক পৃথিবীতে এটি স্থায়ী ছকের মতো। তবে এর বাইরে মহাকাশের গভীরে আরও চরম আবহাওয়া রয়েছে।

অস্বাভাবিক শুক্র গ্রহ:-

শুক্র হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ। সৌরজগতের মধ্যে বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী জায়গা এই শুক্র গ্রহ। শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বেশি এবং এটি কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা গঠিত। শুক্র গ্রহে বায়ুমণ্ডলের চাপ পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৯০ গুণ বেশি। সূর্যের বিকিরণকে এখানকার বায়ুমণ্ডল আটকে রাখে, যার অর্থ হচ্ছে- শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। এখানে পা রাখা মাত্রই আপনি সেদ্ধ হয়ে যাবেন বা শুক্র গ্রহের বৃষ্টি হচ্ছে ধ্বংসাত্মক সালফিউরিক অ্যাসিড।

আরও পড়ুন: ক্যামেরায় কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়

সেজন্য এখনও শুক্র গ্রহে কেউ যেতে পারেনি। শুক্র গ্রহের চরম তাপমাত্রার কারণে বৃষ্টি পড়ার আগেই বাষ্প হয়ে যায়। শুক্র পড়ামাত্রই শরীর কিংবা নভোচারীর পোশাক পুড়ে যাবে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, শুক্র গ্রহেও তুষারপাত হয়, কিন্তু এটি পৃথিবীর তুষারপাতের মতো নয়। এখানকার তুষারপাত হচ্ছে ধাতব বা কঠিন পাথর দিয়ে তৈরি। কিন্তু এই ধাতব বস্তু বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।

উত্তাল গ্রহ নেপচুন:-

আমাদের পৃথিবীর অন্যদিকে ইউরেনাস এবং নেপচুন গ্রহ রয়েছে এবং নেপচুন গ্রহটি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে। নেপচুন গ্রহটিতে ঠাণ্ডায় জমে থাকা মিথেন গ্যাসের মেঘ রয়েছে। নেপচুন গ্রহের বাতাস সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী। কারণ নেপচুন গ্রহের উপরিভাগ অনেকটা সমতল যার ফলে মিথেন গ্যাসযুক্ত বাতাসের গতিকে থামানোর কোনও উপায় নেই। আবার গতি ঘণ্টায় ২৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে ও এখানকার গড় তাপমাত্রা (-২০০) ডিগ্রি। তাই নেপচুনের উপরিভাগে যাওয়া মাত্রই আপনি সাথে সাথে ঠাণ্ডায় জমে যাবেন।

সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলো:-

সৌরজগতের বাইরেও এমন কিছু গ্রহ আছে যে গুলো সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। ব্রিটেনের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির গবেষক টম লুডেন, সৌরজগতের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন এবং অন্য গ্রহগুলোতে বায়ুমণ্ডলের অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ, তিনি বলেন ১ টি গ্রহ আছে যেটির নাম এইচডি১৮৯৭৩৩বি। এই গ্রহটি গাঢ় নীল যা পৃথিবী থেকে ৬৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে এবং এটি চরম আবহাওয়ার জন্য পরিচিত।

দেখতে সুন্দর হতে পারে কিন্তু এই গ্রহটির আবহাওয়ার অবস্থা খুবই বিধ্বংসী। এই এইচডি১৮৯৭৩৩বি গ্রহে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০০০ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর তুলনায় ২০ গুণ বেশি সূর্যের কাছাকাছি। এইচডি১৮৯৭৩৩বি বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এক হাজার ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ গলিত লাভার মতো গরম। আমাদের গ্রহের পাথরগুলো তরল হয়ে বাষ্প হয়ে যাবে বা গ্যাসে রূপান্তরিত হবে।

বসবাসযোগ্য জায়গা আছে কি?

গবেষক টম লুডেন বলেন, পৃথিবীর সমান আরও অনেক গ্রহ আছে যেগুলো এম ডর্ফ অথবা রেড ডর্ফ নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে ও এগুলো হচ্ছে ছায়াপথের সবচেয়ে পরিচিত নক্ষত্র। তবে এরা ছায়ার ভেতরে লুকিয়ে থাকে বা এগুলোর আলো এতো কম যে, পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এসব গ্রহ বসবাসযোগ্য কিনা সেটি ভিন্ন এক প্রশ্ন?

এমন অনেক গ্রহ আছে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, যেগুলোর অবস্থান সূর্য থেকে খুব একটা দূরে নয় আবার কাছেও নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব গ্রহ যাকে প্রদক্ষিণ করছে তার দিকে একটি মুখ করে থাকে। যেমনটা চাঁদ, সবসময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে রাখে। সেজন্যই একপাশে সবসময় দিনের আলো পাবেন এবং অন্যপাশে সবসময় রাত থাকবে।

আরও পড়ুন: মৌমাছি সম্পর্কে অজানা তথ্য

গবেষক টম লুডেন আরও বলেন, টাইডাল লকিং প্রভাবের কারণে এটি হয়, গ্রহের একটি পাশ অপর পাশের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায় ও তাপ বিতরণের সময় সেখানে শক্তিশালী বাতাস তৈরি হয়। কিন্তু গবেষক লুডেন বলেন, এগুলো একটি মডেলের অনুমান মাত্র, অন্য বিশেষজ্ঞরা এসব গ্রহে জীবন নিয়ে আশাবাদী।

গবেষক ড. ইঙ্গো ওয়াল্ডম্যান বলেন, যদি বায়ুমণ্ডলের স্তর যথেষ্ট মোটা হয়, তাহলে দিন থেকে রাতের প্রবাহ এমনভাবে হবে যাতে রাতের সময়টা ঠাণ্ডায় জমে না যায়। তিনি আরেকটি মডেলে বলেন, দিনের বেলায় সবচেয়ে উষ্ণ জায়গা থেকে পানি যখন বাষ্প হয়ে যায়, তখন সেটি মেঘ হিসেবে ঘনীভূত হয় এবং দিনের আলোর জায়গায় স্থায়ী মেঘ তৈরি করে। তাই যতদিন আমরা পৃথিবীর বাইরে অন্য আরেকটি গ্রহে বসবাসযোগ্য; জায়গা না পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত এখানকার মতো জায়গা আর নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *